নিয়ন্ত্রণহীন খুলনার চালের বাজার। বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের দাম বাড়ার পেছনে বন্যা এবং সিন্ডিকেটের সাথে দায়ী করা হচ্ছে ধানের বাড়তি দামকেও৷ চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষেরা।
সূত্র মতে, কুষ্টিয়ায় মিল পর্যায়ে গেল মঙ্গলবার মোটা চাল ৪২ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৮ এবং সরু মিনিকেট ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুলনার বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারের চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা, বিশ্বাস মিনিকেট ৫৫-৫৮ টাকা, এরফান মিনিকেট ৫৮-৬০ টাকা, বাসমতি ৬৫ টাকা, বালাম ৫০ টাকা, মোটা ও স্বর্ণা ৪৫ টাকা, আঙুর বাসমতি ৬৫ টাকা, পরস বালাম ৫০-৫২ টাকা, ময়ুর-২৮চাল ৫০ টাকা, মজুমদার২৮চাল ৫০ টাকা, ইরি আতপ ৪০ টাকা, ভাইটাল (বটিয়াঘাটা)৭০ টাকা, বিআর২৮ ৫০ টাকা। যা সপ্তাহ খানেক আগেও কেজি প্রতি ৩-৫ টাকা পর্যন্ত কম ছিল।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) দেশে খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ১৪ লাখ ১৮ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১১ লাখ ১৪ হাজার টন এবং গম ৩ লাখ ৪ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ সন্তোষজনক। দেশে ২০১৭ সালে হাওরে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। তখন মোটা চালের কেজি ৫০ টাকায় উঠেছিল। তারপর এ বছরই চালের দাম এতটা বেশি।
বড় বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স আশরাফ ভান্ডারের সত্ত্বাধিকারী বলেন, মৌসুম এখন প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। তাছাড়া এবার বছরজুড়েই প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে। এখনও প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ কম, দামও বেশি। ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে চালের দামও বেড়েছে। অন্য একজন পাইকারী ব্যবসায়ী দাম বাড়ার কারণ জানাতে গিয়ে বলেন, মিল মালিকরা দাম বাড়ালে আমাদেরও দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকেনা। তাছাড়া করোনার পর থেকে ট্রাক ভাড়াও বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ী মোঃ মিজান বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে কেজি প্রতি আমাদেরও কিছুটা দাম বেড়ে য়ায়। তবে পূর্বের দামের চাল কেনা থাকায় তিনি এখনো সেই দামেই বিক্রি করছেন।
জ্যোতি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক জহুরুল ইসলাম জানান, পাইকারী বস্তা প্রতি ১০০-২০০ টাকা বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। ফলে কেজি প্রতি দাম কিছুটা বেড়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পেঁয়াজের দাম নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ নাভিশ্বাসের মধ্যে আছি। এর মধ্যে আরেকটি দুঃসংবাদ হয়ে এলো চালের দাম। আমরা এখন কোথায় যাবো। হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ায় বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তারা জানান, শ্রমের দাম না বাড়লেও চালের দাম বাড়ায় তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। চালের দাম আরও বাড়লে তারা চরম বিপাকে পড়বেন। তারা পেঁয়াজের মত চাল সিন্ডিকেটকই দায়ী করছেন দাম বৃদ্ধির জন্য।
গল্লামারী ইনসান সুপার মার্কেটে চাল কিনতে আসা আব্দুল মজিদ জানান, আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানষ খুব অসহায় হয়ে পড়ে এভাবে চালের দাম বাড়লে। পেঁয়াজ না হলেও কখনো কখনো চলে কিন্ত চাল না হলে আমরা বাঁচবো কি খেয়ে।
উল্লেখ্য, করোনার কারণে মধ্যবিত্তসহ নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সেই সাথে অন্যান্য জিনিসের ন্যায় চালের মত এমন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম বাড়লে মানুষ চরম অসহায় হয়ে পড়বে।
খুলনা গেজেট / এমএম