খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত

নির্ভুল ভোটার তালিকার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে ইসি

গেজেট ডেস্ক

ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য কমিশন সচিবালয়কে ওয়ার্কিং প্ল্যান তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কমিশন সভায়। তবে সভার কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। বুধবার বিকালে ‘নির্বাচন ভবনে’ অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওই বৈঠকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের সম্ভাব্য সময়, জনবল ও ব্যয় সম্পর্কে ধারণাপত্র উপস্থাপন করে ইসি সচিবালয়। এতে বলা হয়, এই প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে সময় লাগবে সাত থেকে নয় মাস। এ প্রক্রিয়ায় ৭৫ হাজার জনবলের প্রয়োজন হবে। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা মন্তব্য করেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কর্মসূচি নেওয়া হলে নতুন কমিশনের কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কাছে দৃশ্যমান হবে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা তৈরি হবে। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মানুষের আগ্রহ বাড়বে। ভোটার তালিকার সঠিকতা নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে, তার যাচাই করাও সম্ভব হবে। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ও ভুয়া ভোটার রয়েছে কি না তা শনাক্তে জোর দেয় নতুন কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম বলেন, নির্বাচন কমিশনের সামনে আমাদের প্রতিটি কার্যক্রমের ওপর ধারাবাহিক ব্রিফিং দেওয়া হবে। এরই অংশ হিসাবে প্রথমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের ওপর ব্রিফিং দিয়েছি। আমাদের প্রস্তুতি, সক্ষমতা এবং কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে তা তুলে ধরেছি। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারগণ বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ হালনাগাদে ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ১৮ লাখে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তখন ১৬ বছর বয়সিদেরও তথ্য আগাম সংগ্রহ করেছিল ইসি। এতে এক কোটি এক লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়, তাদেরকে তখন ভোটার তালিকাভুক্তি করা হয়। বাকি ১৩ লাখ নাগরিকের তথ্য ইসির কাছে রয়েছে, যাদের বয়স আগামী ১ জানুয়ারি ১৮ বছর পূর্ণ হবে। ২০২৫ সালের ২ মার্চ হালনাগাদ তালিকায় তাদের নাম যুক্ত হবে।

জানা গেছে, নতুন কমিশন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পরিকল্পনা করছে। এ কর্মসূচিতে নেওয়া তথ্য ২০২৬ সালের ২ মার্চ যে হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেখানে যুক্ত হবে। অর্থাৎ হালনাগাদে যারা ভোটার হিসাবে যুক্ত হবেন, তাদেরকে ভোটের সুযোগ দিতে হলে ২০২৬ সালের মার্চের পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির কর্মকর্তারা জানান, ওই সময়ের আগে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হলে ভোটার তালিকা আইনের সংশোধন আনতে হবে। বর্তমানে সংসদ বহাল না থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ আকারে আইন সংশোধন করতে পারবে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ও চার কমিশনার গত রোববার দায়িত্ব নেন। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম নিয়ে প্রথম কোনো বৈঠক করলেন।

ইসি সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ আইন ও বিধিমালা এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ইসি সচিব শফিউল আজিম। একই সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে সম্ভাব্য সময়, ব্যয়, লজিস্টিক সাপোর্ট ও জনবলের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। বৈঠকে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সম্ভাব্য সময় ও ব্যয় সম্পর্কেও ধারণা দেন। এতে তিনি জানান, এক বছরের মধ্যে ভোটার হওয়ার যোগ্য এমন ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হলে তা বাস্তবায়নে ৭ মাস সময় লাগবে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ১২৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মতো তিন বছরের আগাম তথ্য নেওয়া হলে সময় লাগবে ৯ মাস এবং ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি টাকা। দুই বছরের তথ্য নেওয়া হলে সময় লাগবে ৮ মাস ও ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা। এসব কার্যক্রমে জনবলের প্রয়োজন হবে ৭৫ হাজার।

এতে আরও জানানো হয়, নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ, ডাটা এন্ট্রি, প্রুফ রিডিং, ছবি তোলা এবং আঙুলের ছাপ নিতে যেসব যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হবে, তা পুরোপুরি ইসির কাছে মজুত নেই। এসব যন্ত্রাংশ কিনতে হবে। নতুন ভোটার ও মৃতদের তথ্য সংগ্রহের জন্য পৃথক ফরমও ছাপতে হবে। হালনাগাদ কার্যক্রম যারা পরিচালনা করবে, তাদেরকে প্রশিক্ষণও দিতে হবে।

সূত্র আরও জানায়, ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। বিদ্যমান তালিকায় ভুয়া ভোটার বা রোহিঙ্গারা আছে কি না তা শনাক্তে কৌশল খুঁজতে ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!