খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় জাপা, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত

গেজেট ডেস্ক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে যৌথ সভা করেছে জাতীয় পার্টি।

সভায় বাংলাদেশের ওপর বিদেশিদের স্যাংশনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেখানে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় চলে এলেও তার সময়কাল কতটুকু হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির নেতারা। বিএনপির আন্দোলন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতেও আলোচনা হয় যৌথ সভায়।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

সভাসূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বিদেশিরা বাংলাদেশের ওপর যেভাবে স্যাংশন দিচ্ছে তাতে আগামী নির্বাচন সময়মতো হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেললেও কতদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পরিষ্কার নয়। তাই এই অবস্থায় জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছুদিন সময় নিতে চায়। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা পরিষ্কার হবে বলে মনে করেন জিএম কাদের।

সভায় অংশ নেওয়া নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে করবে নাকি এককভাবে অংশ নেবে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে কত আসন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে, কম ছাড় দিলে করণীয় কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদের ধারণা, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলবে, সেখানে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে বিএনপির অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বিএনপিকে নিয়ে সবার মূল্যায়ন হচ্ছে- তারা এখনও মাঠে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা বলেন, আমি মনে করি আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী করে ফেলবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে সেখানে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়া উচিত।

বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির এক প্রেসিড়িয়াম সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে আমরা কিছুদিন সময় নেবো। আগামী ৫ নভেম্বর যেহেতু একটি উপনির্বাচন আছে, ফলে নভেম্বরের ১০/১৫ তারিখের আগে নির্বাচনের তফসিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই তফসিল পর্যন্ত দেখে এবং এর মধ্যে বিদেশিদের পদক্ষেপ কী হয়, তা দেখে জাতীয় পার্টি নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

আগামী নির্বাচন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নিতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তবে, বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন যে নির্বাচন নিয়ে চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেবেন সবাই তা মেনে নেবেন
বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা নির্বাচন ইস্যুতে আরও কিছুদিন সময় নিতে চাই।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের ওপর আমেরিকার যে চাপ তা অনেকাংশে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য। এখানে বিএনপি খুব বেশি মুখ্য নয়। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি ইউনূস ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা করে ফেলে তাহলে চাপ অনেক কমে যাবে। এছাড়া বিএনপিও শক্ত কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি যে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে।

সরকার জাতীয় পার্টিকে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে জিএম কাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে আগে। সরকার যদি জিএম কাদরকে পাশ কাটিয়ে রওশন এরশাদকে বেশি মূল্যায়ন করতে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন কিছু ঘটতে পারে।

এই নেতা আরও দাবি করেন, বাংলাদেশে কোনো সরকারই আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করেনি। যতক্ষণ না উত্তর পাড়া (ক্যান্টনমেন্ট) থেকে চাপ আসে। বর্তমানে সেখানে শান্তি বিরাজ করছে। তাই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে, পরিষ্কার কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এজন্য আগামী নির্বাচন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নিতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন যে নির্বাচন নিয়ে চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেবেন সবাই তা মেনে নেবেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সংসদ সদস্য বলছেন, বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও রওশন এরশাদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের নেতারা মনে করেন- জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা এবং ২৫ জনের বেশি সংসদ সদস্য জিএম কাদেরের পক্ষে রয়েছেন। ফলে, সরকার জাতীয় পার্টিকে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে জিএম কাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে আগে। সরকার যদি জিএম কাদরকে পাশ কাটিয়ে রওশন এরশাদকে বেশি মূল্যায়ন করতে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার বলেন, মূলত আগামী নির্বাচন নিয়ে যৌথ সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যরা একমত হয়েছেন নির্বাচন নিয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সবাই তা মেনে নেবেন।

বৈঠকে নির্বাচনের আগে ৮ বিভাগে সমাবেশ এবং ঢাকায় মহা সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!