বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ হৃদরোগজনিত জটিলতার কারণে মারা যায়। এটা খুবই উদ্বেগজনক। এ কারণে প্রত্যেকেরই হৃদরোগ সম্পর্কে আরও জানা প্রয়োজন। বিশেষ করে হৃদরোগের ঝুঁকি এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে আগেভাগেই রোগ সনাক্ত এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া যায়।
গবেষণা বলছে, পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন। কী কারণে নারীদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি তা জানানো হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে। ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌরব মিনোচা নারীদের মধ্যে কেন হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি তা জানিয়েছেন।
ডা.মিনোচা বলেছেন, পুরুষের মতো নারীদের মধ্যে হৃদরোগ সাধারণ সমস্যা। তবে বেশিরভাগ নারীই তা বুঝতে পারেন না। এ কারণে অনেকে দেরীতে চিকিৎসকের কাছে যান।
সচেতনতার অভাব: হৃদরোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল সচেতনতার অভাব। এর জন্য পুরুষ, নারী সবাই ঝুঁকিতে আছেন।
মায়োক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, কেউ কেউ হৃদরোগকে পুরুষদের জন্য বেশি সমস্যা বলে মনে করে,কারণ নারীদের কিছু হৃদরোগের লক্ষণ পুরুষদের চেয়ে আলাদা। নারীদের মধ্যে অনেকেই এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানেন না।
লক্ষণগুলি অস্বাভাবিক মনে হওয়া: নারীদের হৃদরোগের লক্ষণ পুরুষের চেয়ে আলাদা, যা কারও কারও কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। ডা.মিনোচার ভাষায়, পুরুষের মতো হৃদরোগে আক্রান্ত হলে নারীরা বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব নাও করতে পারেন। নারীদের মধ্যে লক্ষণগুলি কারও কারও কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। বুকে ব্যথা না করলেও অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
নারীদের মধ্যে উপসর্গ কী?
ডা. মিনোচা বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হলে নারীদের মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তা হলো-বুক ভারী হওয়া, শ্বাসকষ্ট, অস্থিরতা বা উদ্বিগ্নতা এবং আতঙ্কিত বোধ করা, হাত বা কাঁধে অস্বস্তি, মাথা ঘোরা, পেটে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব বা শুধু অস্বস্তি বোধ করা। এই লক্ষণগুলি অন্যান্য অনেক শারীরিক সমস্যাতে দেখা যায়, এ কারণে নারীরা হৃদরোগের উপসর্গ অনেক সময় বুঝতে পারেন না।
উপসর্গ উপেক্ষা: ডা. মিনোচা বলেন, বেশিরভাগ নারীই নিজেদের সমস্যা চাপা দিয়ে রাখেন। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দেরি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মধ্যে সমস্যাকে উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা যায়। ডা মিনোচার ভাষায়, হৃদরোগের লক্ষণগুলি মিস করার সবচেয়ে সাধারণ এবং সুস্পষ্ট কারণগুলির মধ্যে এটা একটি বলে তিনি জোর দেন৷ তার মতে, আর্থ-সামাজিক কারণেও নারীদের নিজের সমস্যা উপেক্ষা করতে দেখা যায়।
কোন কোন ঝুঁকি জড়িত?
ডা. মিনোচার মতে আরও কিছু কারণ রয়েছে যা নারীদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তিনি জানান, ডায়াবেটিস, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ, ধূমপান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, মেনোপজ, গর্ভাবস্থার জটিলতা, হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকা, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং লুপাসের মতো প্রদাহজনক রোগ নারীদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
খুলনা গেজেট/এনএম