প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘সারা দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনায় সরকারও বিব্রত। আমরাও এসব ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করছি।’ বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্মরণে সংবিধান, বিচার বিভাগ ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারপ্রার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থল হলো বিচার অঙ্গন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অনেক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভার্চুয়াল আদালতের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দেশে করোনা পরিস্থিতিতে আদালত অঙ্গন সচল রাখতে তিনি অনেক অবদান রেখেছেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘১৯৮২ সালে হাইকোর্টে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয় ১৯৯২ সালে। আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনি বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে আমার জয়ে অবদান রাখেন।’
বিচারাঙ্গনের দূর্নীতি দূর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আদালতের ফাইলিং সেকশন এবং বিভিন্ন শাখায় অনিয়ম রয়েছে। এসব অনিয়ম দূর করতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন সেন্ট্রাল ফাইলিং করার জন্য। এতে ৫০ ভাগ অনিয়ম দূরীভূত হয়ে যাবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি রাজি না হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আমি মনে করি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সততা ও অনিয়ম দূরীকরণে মাহবুবে আলম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দেশের জন্য, সরকারের জন্য যে অবদান রেখেছেন তার জন্য সরকার ও দেশ তাঁর কাছে অনেক ঋণী। তাঁকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনোকিছু করা যায় কি না, সেটা আমি চেষ্টা করব।’
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। হাইকোর্টে আমি কোনো অনুষ্ঠানে থাকব আর মাহবুবে আলম সেখানে উপস্থিত থাকবেন না তা কল্পনাও করতে পারি না।’
অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মরণ করে আনিসুল হক আরো বলেন, ‘৪০ বছর আগেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। সুপ্রিম কোর্টে একমাত্র তাঁর লম্বা লম্বা চুল ছিল। তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করীমের জুনিয়র ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণাবলী ছিল তিনি কখনো মেজাজ হারাতেন না। মামলা হেরে গেলেও মুচকি হেসে কথা বলতেন। প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে কখনো আপস করেননি। তার সততার জন্য জাতি তাঁকে স্মরণে রাখবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বার কাউন্সিলের অনিয়ম ও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির সার্টিফিকেট দূরীকরণে প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁর একক প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছিল। তাঁর সততা ও যোগ্যতায় তিনি আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন।’
অনুষ্ঠানে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাশহুদুল হকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এম আমিন উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি আশুতোষ সরকার, সহসভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন, শামীমা আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেলের আত্মার মাগফিরাত কমনা করে দোয়া করা হয়।
খুলনা গেজেট / এমএম