দেশের নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় সবার উপরেই থাকবে খুলনার নাম। কারণ বাংলাদেশ দলকে সবথেকে বেশী নারী ক্রিকেট উপহার দিয়েছে খুলনা জেলা। এক সময় জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে প্রথম একাদশে অন্তত ৬ থেকে ৭ জন ক্রিকেটার থাকতো এই জেলার। সেই সংখ্যা এখন কমে কখনও ৩ কখনও ৪। তবে শঙ্কার কথা, নারী ক্রিকেটের পাইপ লাইনে নেই খুলনার কোন ক্রিকেটার। ফলে জাতীয় দলের পরবর্তী ধাপে খুলনার কোন ক্রিকেটার নাও থাকতে পারে। বর্তমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও ক্রীড়া সংগঠকরা মনে করছেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং বিসিবির যৌথ উদ্যোগই খুলনার নারী ক্রিকেটের হারানো পথ থেকে সঠিক পথে আনতে পারে। নতুন নারী ক্রিকেটার তৈরীর উদ্যোগ এখনই না নিলে খুলনার নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরী হবে।
খুলনার মেয়েদের ক্রিকেটের পথচলাটা শুরু মূলত কোচ ইমতিয়াজ হোসেন পিলুর হাত ধরে। সময়ের সাথে সাথে তিনিও নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। নতুন কোন কোচ নেই খুলনার মেয়েদের জন্য, নেই মেয়েদের জন্য ক্রিকেট একাডেমীও।
সময়ের সাথে সাথে অনেক প্রতিবন্ধকতা কাটলেও মেয়েদের ক্রিকেটে এখনও সমস্যার অন্ত নেই। মাঠ সংকট, নতুন নতুন খেলোয়ার তৈরীর উদ্যোগ না থাকার কষ্ট ভাবিয়ে তোলে কোচ ইমতিয়াজ হোসেনকে। আশাবাদী কোচ পিলু অবশ্য আশা ছাড়েন না। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা পেলে খুলনা অঞ্চল থেকে আগামীতে আরও প্রতিভাবান ক্রিকেটার গড়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। যদিও অনেকটা অভিমান জমে আছে ইমতিয়াজ হোসেন পিলুর কণ্ঠে। এখন আর নতুন কোন ক্রিকেটার তার একাডেমিতে আসতে চাইলে তিনি উৎসাহিত করেন না। ফলে পরবর্তী পর্যায়ে খুলনা থেকে নারী ক্রিকেটার উঠে আসা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
কোচ ইমতিয়াজ হোসেন পিলু এই ক্রিকেট কোচিং থেকে অনেক সম্মান পেয়েছেন তবে না পাওয়ার গল্পটাও তার বেশ বড়। আক্ষেপ করেই বলছিলেন, ‘স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সব জায়গাতেই আমার কাজ নিয়ে সমালোচনা। নানা ভাবে আমাকে কাজ করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা অনুশীলনের জন্য কখনও আমাকে মাঠ ব্যবহার করতে দেয় না। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে গিয়ে বিসিবিরও বাধার সম্মুখীন হয়েছি বারবার। এসব ক্ষেত্রে পুর্ণ সহযোগিতা পেলে হয়তো খুলনাসহ দেশের মেয়েদের ক্রিকেট আরও অনেক বেশী এগিয়ে যেতে পারতো।’
আর এসব কারণে যে কয়েকজন পুরোনো নারী ক্রিকেটার আছেন তাদের নিয়েই আপাতত পথ চলছেন কোচ ইমতিয়াজ হোসেন পিলু। নতুন কোন ক্রিকেটার আসলে তিনি নিতে চান না। তাহলে ভবিষ্যৎ কি হবে খুলনার নারী ক্রিকেটের, দেশের নারী ক্রিকেটের..কোচ ইমতিয়াজ হোসেন বললেন, ‘এত এত অনিয়ম, এত এত অসহযোগিতার বিরুদ্ধে আর কতক্ষন এই বয়সে একা লড়াই করে পারবো। সেই সাথে এখন অর্থনৈতিক দিকটাও ভাবতে হচ্ছে। প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা শুধু অনুশীলনের পিছনে আমার খরচ হয়। সব মিলিয়ে অনেক তো সম্মান আর অসম্মান দুটোই পেলাম।’
খুলনার মেয়েদের খেলাধুলায় আরও বেশী সম্পৃক্ত করার জন্য স্থানীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনেক দায়িত্ব থাকলেও সেটা তারা করতে পারছে না বলে মনে করেন পিলু। বলেন, ‘জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা একেবারেই নিস্ক্রিয়। তারা মেয়েদের কোন কাজই করে না। মেয়েদের তাদের নিয়মিত একটিভিটজ থাকলে সেখান থেকে বাছাই করেও ক্রিকেটার নিয়ে আসা যেতো।’
২০২১ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। সেই বিশ্বকাপে স্বাগতিক বাংলাদেশই। নারীদের বয়স ভিত্তিক ওই বিশ্বকাপ নিয়ে এরই মধ্যে বিসিবি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিসিবির সেই উদ্যোগ খুলনায় এসে পৌছাঁয়নি।
খুলনা গেজেট/এএমআর