রাশিয়ার কারাগারে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং কট্টোর সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনির। গত বছরের আগস্টে কথিত ‘জালিয়াতি মামলায়’ অ্যালেক্সিকে দীর্ঘ ১৯ বছর রাশিয়ার কারাগারে বন্দি থাকার সাজা দিয়েছিল এক রুশ আদালত। তার আগে তিনি জালিয়াতির অভিযোগে সাড়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। মৃত্যুর সময় অ্যালেক্সি আর্কটিক জেল কলোনিতে ছিলেন। বন্দীদের ওপর নিষ্ঠুরতার কুখ্যাতি রয়েছে এ কারাগারের। গত শুক্রবার সেই কারাগারেই তার মৃত্যু হয়।
রাশিয়ায় এক দশকের বেশি সময় রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যালেক্সি নাভালনি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পুতিন প্রশাসনের ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তুলে ধরতেন তিনি। কোটি কোটি মানুষ তা দেখতেন। নাভালনির ডাকে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে এসে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে শামিল হতেন।
কারাগারে থেকেও সমাজমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন অ্যালেক্সি নাভালনি। তিনি নিজের বার্তা আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠাতেন এবং সেই বার্তা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হত। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নিজের মনের কথা সমাজমাধ্যমের সাহায্যে জানিয়ে গিয়েছেন অ্যালেক্সি। গত ২৬ ডিসেম্বর সেখান থেকেই সমাজমাধ্যমে থেকে প্রথম পোস্ট করেন তিনি। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার জন্য কেউ চিন্তা কোরো না। সব ঠিক আছে। আমি খুব খুশি যে, এই জেলে এসেছি।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমি এখন আর্কটিক সার্কেলের উপরে থাকি। কিন্তু আমি ‘হো-হো-হো’ বলি না, আমি যখন জানালার বাইরে তাকাই তখন ‘ওহ-ওহ-ওহ’ বলি। জানলার বাইরে প্রথমে রাত, তার পর সন্ধ্যা, তার পর আবার রাত দেখা যায়।’
তীব্র সালোচনার কারণে পুতিন ও ক্রেমলিনের চক্ষুশূল ছিলেন নাভালনি। ধারণা করা হয়, পুতিনের ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে কারাবন্দী নাভালনি ছিলেন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর তার খেসারত দিলেন তিনি কারাবন্দী অবস্থায় জীবন দিয়ে।
পাকিস্তানের নির্বাচন শেষ হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। তবে তার রেশ কাটেনি এখনো। নির্বাচনের আগে কারাবন্দি ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত প্রার্থীদের হারানোর জন্য সে দেশের সেনাবাহিনী এমন কিছু নেই করেনি। কিন্তু চতুর ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সেই ইমরান খানের প্রার্থীদেরই ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন! এরপর ইমরান খানের সমর্থিত বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নওয়াজের দলে ভেড়ানোর চেষ্টাও ছিল চোখে পড়ার মতো। যা বিশ^ মিডিয়ার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে। সেই ভোটরঙ্গ চলছে এখনো।
পাক নির্বাচন কমিশনকে অবাক করে দিয়ে কারচুপির অভিযোগ তুলে হঠাৎ আসন ছাড়ার ঘোষণা দেন বিজয়ী এক জামায়াত নেতা নাঈম-উর-রহমান। জামায়াতে ইসলামীর (জেআই) করাচি প্রধান হাফিজ নাঈম-উর-রহমান জয় পাওয়া সিন্ধু বিধানসভার আসনও ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
আল জাজিরা ও দ্যা এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জেআই করাচি প্রধান হাফিজ নাঈম-উর-রহমান নিজের আসন ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সময় চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, নির্বাচনে তার ভোট বেশি দেখিয়ে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আদতে তা ঘটেনি।
রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাট্টাও পাকিস্তানের নির্বাচনে কারচুপির দায় স্বীকার করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ।
তিনি বলেন, আমি সমস্ত অন্যায়ের দায় নিচ্ছি। শুধু আমি নই, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান বিচারপতিও এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত। যেসব প্রার্থীরা নির্বাচনে হেরে যাচ্ছিলেন, তাদের জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান বিচারপতিও এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত। যেসব প্রার্থীরা নির্বাচনে হেরে যাচ্ছিলেন, তাদের জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি বলেন, কারচুপি করার জন্য তার উপর ‘চাপ’ ছিল। এক পর্যায়ে তিনি আত্মহত্যার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু তারপর জনসাধারণের সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সমস্ত আমলাতন্ত্রের কাছে আমার অনুরোধ, এই সমস্ত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে অবিচার করবেন না।’
নায়ক-নায়িকাদের হর-হামেশা বিয়ে আর বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা নতুন নয়। নায়িকা মাহিয়া মাহির ফের বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা সে-রকমই। মৃত্যু পর্যন্ত একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেও ঢাকাই ছবির আলোচিত এই নায়িকা ফের বিয়ে বিচ্ছেদের খবর দিয়েছেন । শুক্রবার মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় মাহিয়া মাহি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সরকার রাকিবের সঙ্গে বিবাহিত সম্পর্কের ইতি টানার আভাস দেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘তার সংসার কেন ভাঙে। কেন হাজবেন্ডের সঙ্গে থাকতে পারল না বা হাজবেন্ড কেন তাকে সহ্য করতে পারছে না। অথবা তার ওয়াইফটা কেন তার হাজবেন্ডকে সহ্য করতে পারছে না। অথবা দুজন কেন ভালো নাই। দুজনের মধ্যে আসলে কী ঝামেলা হয়েছে-এগুলো তো আমরা আসলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বুঝব না। তাই আমরা কাউকে নিয়ে যেন জাজ না করি।’ তিনি জাজ করতে নিষেধ করলেও দর্শকদের মতামত কী বন্ধ করা যাবে?
রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির কারাগারে মৃত্যু, পাকিস্তানের ভোটরঙ্গ আর নায়িকা মাহিয়া মাহির বিয়ে বিচ্ছেদ-এই তিন গোলক ধাঁধাঁর সঙ্গে কী আমাদের রাজনীতির কোনো মিল-অমিল খুঁজে পাওয়া যায়? তা পাঠক মাত্রই ভেবে দেখতে পারেন।
১৭-০২-২৪
লেখক : স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক ইত্তেফাক, খুলনা