খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

নানা ভাগে বিভক্ত খুলনা বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে খুলনা বিএনপি। দলটির খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার নেতারা এখন ৫ ধারায় বিভক্ত। এ নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ আজ শুক্রবার খুলনা মহানগরীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে পালন হচ্ছে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দুটি বলয় তৈরি হয়। সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে দলের বড় একটি অংশ দীর্ঘদিন নিস্ক্রিয় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে সক্রিয় হয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছেন তারা। আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষেও আলোচনা সভা ও র‌্যালির কর্মসূচি দিয়েছে তারা।

নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান কমিটির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহির, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ এই অংশের নেতারা প্রথম দিকে বেশ সফলতার সঙ্গে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করছেন। তবে ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে আহবায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহিরসহ বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহবায়কের। নতুন কমিটির নেতারাও এখন বহুভাবে বিভক্ত।

এদিকে জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান ও সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীর সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবাদুল হক রুবায়েতসহ বড় আরেকটি অংশের। এর ফলে দলের মধ্যে বিরাজ করছে অস্বস্তি-অস্থিরতা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে ৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০২২ সালের ১ মার্চ ৬৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত ২৪ এপ্রিল ৫টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভায় পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়। মূলত এরপর থেকেই অভ্যন্তরীণ বিরোধ বেড়েই চলেছে।

দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ত্যাগী অনেক নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূলত এ নিয়েই বর্তমান আহবায়ক ও সদস্য সচিব এবং তাদের অনুসারিদের সঙ্গে অন্যদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। গত ৪ আগস্ট সমাবেশে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবাদুল হক রুবায়েতের অনুসারিদের সঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীর অনুসারিদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়।

এর আগে বিএনপির ইফতার পার্টিতে মনিরুল ইসলাম বাপ্পীর অনুসারী জেলা যুবদল নেতা নাদিমুজ্জামান মনিকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষরা।

জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু বলেন, কমিটিসহ বেশকিছু বিষয়ে মতপার্থক্য ছিলো। একটি অনাকাংখিত ঘটনাও ঘটেছে। সেটা আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল ও রকিবুল ইসলাম বকুল বসে মিটিয়ে দিয়েছেন।

তবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, আহবায়ক কমিটির সভায় আলোচনা করেই কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু আহবায়ক কমিটির কয়েকজন নেতা ভুয়া অভিযোগ তুলে দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি বড় দল, এখানে কিছু মতবিরোধ থাকতে পারে। সেগুলো নিরসন করা হয়েছে।

এদিকে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে ৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০২২ সালের ১ মার্চ ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত ৯ মার্চ নগরীর ২০টি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়নে এবং ২৭ জুন ৯টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়।

দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন দলের মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মহানগর আহবায়ক কমিটির সবার মতামত নেওয়া হয় না। সে কারণে ক্ষোভ ও হতাশা থেকে আহবায়ক কমিটির ২৫/৩০ জন সদস্য এখন আর দলীয় কার্যালয়ে যায় না।

মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। সমর্থকরাও এখন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। কিন্তু এই উপস্থিতিতে নেতাদের কোনো ভূমিকা নেই। বরং যোগ্য নেতৃত্বে অভাবে দলের মধ্যে ভেদাভেদ বাড়ছে। অপমান ও লাঞ্চিত হয়ে অনেক সিনিয়র নেতা কার্যালয়বিমূখ হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমানে সদস্য সচিবের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দল পরিচালিত হয়। এখানে সিনিয়র নেতাদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। তিনি বলেন, আমরা একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। কিন্তু দলের মধ্যেই যদি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে কর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলে।

তবে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি দল পুনর্গঠনের কাজে ব্যস্ত। আর যারা দলের কর্মকান্ডে ঠিকমতো সময় দেয় না, তারাই বিভিন্ন অভিযোগ করছে। তিনি ও আহবায়ক কারও সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন না।

এদিকে মহানগর বিএনপির বর্তমান আহবায়ক কমিটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘দা-কুমড়া’। গত ১৫ জুলাই মঞ্জু ফুলবাড়িগেট এলাকায় সভা করতে গেলে অপর গ্রæপ তার গাড়ি ভাংচুর করে। ১৭ জুলাই মঞ্জু গ্রুপ বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিলে হামলা করে তাদেরকে মঞ্চের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২৬ জুলাই মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি ও মঞ্জু গ্রুপ পৃথকভাবে ঢাকার সমাবেশে যায়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে পৃথকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দুই গ্রুপ।

এ ব্যাপারে শফিকুল আলম তুহিন বলেন, কয়েকজন নেতা দেড়বছরের বেশি সময় ধরে কর্মসূচিতে আসে না। সামনে বিএনপির সুসময় আসছে-এমন ধারণা থেকে তারা আবার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে। এটা সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা।

মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি তিনি একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অবহিত করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে বলে অপেক্ষায় রয়েছেন।

খুলনা গেজেট/এইচ/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!