নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সম্মেলনে দৃষ্টি ফেলছে খুলনা মহানগর বিএনপি। এ লক্ষে ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করে থানা সম্মেলন শুরু করবে দলটির নেতারা। ইতিমধ্যে নগরীর ৩১টি ও ওয়ার্ডের ২৭টির সম্মেলন এবং সরাসরি ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও।
বর্তমান নেতারা বলেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা পেলে চলতি মাসেই মহানগর সম্মেলন করতে চায় দলের নেতারা। এ কারণে নগর নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব নির্বাচন
প্রণয়ন করা হয়েছে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা
দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করলে কঠোর ব্যবস্থা
দলটির মহানগর মিডিয়া সেল ও নেতাকর্মীরা জানান, ২০২১ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিনের কমিটি ভেঙে দিয়ে তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আল মনাকে আহ্বায়ক, তরিকুল ইসলাম জহিরকে যুগ্ন আহ্বায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করা হয়। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দলটিতে দীর্ঘ দায়িত্বে থাকা সাবেক নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীদের বিদ্রোহের মুখে পড়েন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১ মার্চ ঘোষিত হয় ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি। একদিকে বিদায়ী সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা, বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চ, কারাবাস অন্যদিকে দলের একাংশের বিরোধীতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আহ্বায়ক কমিটি। এ অবস্থায় প্রথমে নগর জুড়ে ৩৪টি ইউনিটে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করেছে দলটি। এই সদস্যদের প্রতিনিধিদের ভোটে প্রথমে ৩১টি ওয়ার্ড ও ৩টি ইউনিয়নে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন শেষ করে। একইভাবে গঠিত হয় নগরের নগরীর ৫টি থানা কমিটি। বর্তমানে নগর নিয়ন্ত্রিত সদর, সোনাডাঙ্গা ও দৌলতপুর থানার ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন ও সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মাধ্যমে গোপন ব্যালটে ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হচ্ছেন। মহানগরের মনোনীত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ও সকল প্রার্থীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে ভোট ও ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। ফলে সকল ওয়ার্ডে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা নেতৃত্বে আসছেন।
মহানগর নেতারা জানান, ইতিমধ্যে ৫টি থানার ২৫টি ওয়ার্ড ও দুটি ইউনিয়নে সম্মেলন শেষ হয়েছে। বাকী ইউনিটের সম্মেলনও ২/১দিনে শেষ হবে। ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করেই থানা ও মহানগর সম্মেলন শেষ করতে চান বিএনপি নেতারা।
বিএনপির খুলনা সদর থানার সদস্য সচিব মো. ফরিদ মোল্লা বলেন, সদর থানার শাখার ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ হয়েছে। নগর কমিটি নির্দেশ দিলেই থানা সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
সোনাডাঙ্গা থানার সদস্য সচিব সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ বলেন, দলের নেতাকর্মীরা উৎসবের মাধ্যমে ওয়ার্ড সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রতিটি সম্মেলনে ছিল উৎসবের আমেজ।
নগরীর দৌলতপুর থানা বিএনপি সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেন জানান, ইতিমধ্যে দৌলতপুরের সকল ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়নের সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সরাসরি ভোটে একাধিক প্রার্থী ছিলেন। সকলের মধ্যে সম্মেলনের আমেজ ছিল। আমরা এখন প্রথমে ওয়ার্ডের পুর্ন কমিটি ও পরে থানা সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
এদিকে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। চলতি মাসে (নভেম্বর) মহানগর সম্মেলন সামনে রেখে এ নেতারা প্রতিদিনই সকালে দলীয় কার্যালয়ে নানা সাংগঠনিক বৈঠক, মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন। আর দুপুর গড়ালে ছুটছেন ওয়ার্ড সম্মেলনে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য আমাদের সাংগঠনিক কাজ করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া ছিলেন। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনায় অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। চলতি নভেম্বরে মহানগর সম্মেলন শেষ করতে চাইছি। ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারা নেতৃত্বে আসছেন। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।’
শফিকুল আলম তুহিন দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে বলেন, ‘কোন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে মনিটরিং সেলের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত, অভিযোগকারী-অভিযুক্ত সামনা-সামনি জিজ্ঞাসা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে দলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করার সুযোগ পাবে না।’
খুলনা গেজেট/কেডি