ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করল, যা নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা মামলা সংক্রান্ত। এই রায়ের মাধ্যমে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ধারাটির বৈধতা বহাল রেখেছে। এর ফলে ১৯৮৫ সালে সংযোজিত এই আইনটি অসমে প্রযোজ্য থাকবে।
৬এ ধারার প্রেক্ষাপট : ১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত আসাম চুক্তির অধীনে নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারা প্রণয়ন করা হয়। ওই চুক্তির মাধ্যমে আসমের দীর্ঘকালীন অনুপ্রবেশ বিরোধী আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ পর্যন্ত যারা বাংলাদেশ থেকে আসমে প্রবেশ করেছেন, তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। এর ফলে বহু বাঙালি হিন্দু এবং মুসলিম শরণার্থী নাগরিকত্ব লাভ করেন।
আইনি চ্যালেঞ্জ : ২০১২ সালে, আসাম সম্মিলিত মহাসংঘ সংবিধানের এই ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। তাদের দাবি ছিল, ৬এ ধারা সংবিধানের মূলনীতির বিরোধী এবং এটি আসমের ভূমিপুত্রদের অধিকার খর্ব করছে। তাদের মতে, এই ধারা অসামের জনসংখ্যাগত ভারসাম্য নষ্ট করে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সুরক্ষা বিঘ্নিত করে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় : সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার রায় প্রদানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করে। সর্বোচ্চ আদালত উল্লেখ করেছে যে, নাগরিকত্ব আইনের এই ধারা দেশের ঐক্য এবং সংহতির পরিপন্থী নয়, বরং চুক্তির মাধ্যমে একটি বিশেষ পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রণীত হয়েছিল। বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা মনে করেছেন, ৬এ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এটি ভারতের বহুত্ববাদ ও নাগরিক অধিকারের মূলনীতির পরিপূরক। তবে, বেঞ্চের একজন বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন যে, অসমের আঞ্চলিক স্বার্থ ও সংস্কৃতি রক্ষায় এই ধারা কিছুটা প্রতিকূল হতে পারে। তবুও, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই ধারা বহাল রাখা হয়েছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া : এই রায় আসামে এবং গোটা দেশে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অসমের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ রায়ের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কারণ তারা মনে করেন যে এটি আসামের সামাজিক ও জনসংখ্যাগত কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, শরণার্থী পরিবারগুলি এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে, কারণ এটি তাদের নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
এই রায়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার ভবিষ্যত সংরক্ষিত হল এবং আসাম চুক্তির শর্তাবলির আইনি বৈধতা আবারও প্রমাণিত হল। তবে, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে। অন্য দিকে এনআরসি নিয়ে যে কুট কাচাল চলছিল, তার উত্তেজনা বহুলাংশে কমে যাবে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এই আইন শুধু মাত্র আসামের ক্ষেত্রে নয়, সর্ব ভারতীয় ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/ টিএ