পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামে ভোটের ফল নিয়ে বিকেল থেকে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি আর নাটকীয়তার অবসান ঘটেছে শেষপর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, সত্যিকারের জয় পেয়েছেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল জয় পেলেও দলের প্রধান মমতা হারলেন নিজের আসনে।
নন্দীগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ৯ হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়েছেন শুভেন্দু। তৃণমূল নেত্রী মমতা পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৭ ভোট। ফলে ১ হাজার ৭৩৬ ভোটে শুভেন্দুর কাছে হেরেছেন মমতা। নন্দীগ্রামে ভোট পুনর্গণনা হবে না বলেও জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এর আগে সন্ধ্যার দিকে ভারতের প্রধান সব সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসপ্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের খবর দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, ওই আসনে মমতা নয়, জিতেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী।
আনন্দবাজারের সন্ধ্যার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সন্ধ্যা গড়াতে মমতার জয় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বলা হয়, সার্ভারে সমস্যার জেরে সঠিক ভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না। তার পরেই ১৬২২ ভোটে শুভেন্দু অধিকারীর জয়ের খবর আসে। শুভেন্দু অধিকারীও টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘১৬২২ ভোটে জিতেছি আমি।’
অন্যদিকে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নন্দীগ্রাম যা রায় দেব, মাথা পেতে নেব।’ নিজের হারলেও দলের জয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলার জয়ের জন্য সকলকে অভিনন্দন। বাংলার জয়, মানুষের জয়।’
নন্দীগ্রামের মানুষ যা করেছে, ভালো করেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, রায় ঘোষণার পর কারচুপি হয়েছে।’
ভোটে হার মেনে মমতার বক্তব্য প্রচারের কিছু সময়ের মধ্যেই আবার খবর আসে, নন্দীগ্রামে ভোটের ফল স্থগিত করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনি কর্মকর্তা আরিজ আফতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, নন্দীগ্রামে নতুন করে গণনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এর আগে বিকেলে দলের জয় নিশ্চিত হতেই কালীঘাটের বাড়ি থেকে হুইল চেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। পায়ে হেঁটে তিনি ঢোকেন দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে।
দিনভর উত্তেজনার পর ভোট গণনার ষোড়শ রাউন্ড শেষে নন্দীগ্রামে মমতার চেয়ে ছয় ভোটে এগিয়ে যান তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। এরপর সবশেষ রাউন্ডে ব্যবধান আরও দীর্ঘ হয়।
প্রথম দিকের গণনায় শুভেন্দু মমতার চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে যান। গণনার একাদশ রাউন্ডের শেষে ৩ হাজার ৩২৭ ভোটে নন্দীগ্রামে এগিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এরপর আবার তার জয় নিয়ে শংকা তৈরি হয়।
এর আগে সকালে মমতা বন্দোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে হারতে পারেন, এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে আলোচনা তৈরি হয় পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে এই প্রশ্নে কোনো দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব নেই।
তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। নির্বাচনে হেরে গেলেও মমতার মুখ্যমন্ত্রী হতে কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই।
নিয়ম হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের নবনির্বাচিত বিধায়কেরা তাদের পরিষদীয় নেতা নির্বাচিত করবেন। সেই পরিষদীয় নেতা বিধায়ক না হলেও কোনো অসুবিধা নেই।
তবে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাকে কোনো একটি বিধানসভা কেন্দ্র বা বিধানপরিষদ থেকে নির্বাচিত হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানপরিষদ ব্যবস্থা নেই। এখানে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।
এদিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, মোট ২৯২ টি আসনের মধ্যে ২১৫ টিতে জয়ী ও এগিয়ে আছে তৃণমূল। আর ৭৫ টিতে জয়ী ও এগিয়ে বিজেপি। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতাকে।
খুলনা গেজেট/ এস আই