খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

ধোঁকাবাজির অভিযোগ : টালমাটাল গৌতম আদানির ব্যবসা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গের একটি গবেষণা রিপোর্টে মি. আদানির বিরুদ্ধে “কর্পোরেট জগতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির” অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগ করা হয়েছে, আদানি গ্রুপ হিসাবের খাতায় জালিয়াতি করে শেয়ার বাজারে ধোঁকাবাজি করেছে। এমন কথাও ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে আদানি গ্রুপের ঘাড়ে প্রচুর ঋণ রয়েছে যা এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে। হিনডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে মরিশাস এবং ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা থাকার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছে। মঙ্গলবার রিপোর্টটি প্রকাশের সাথে সাথে শেয়ার বাজারে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বুধবার একদিনের লেনদেনে আদানি গ্রুপ তাদের বাজার মূল্য থেকে ১১০০ কোটি ডলার খুইয়ে ফেলে।

এই রিপোর্ট এমন সময় প্রকাশ করা হয় যখন আদানি গ্রুপ শেয়ার বাজারে প্রচুর সংখ্যায় শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছিল। আজ (শুক্রবার) এই গ্রুপের ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার ছাড়ার কথা।

মামলার প্রস্তুতি
আদানি গ্রুপ এখন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানিকে একহাত নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। আদানি গ্রুপ বলছে, হিনডেনবার্গের রিপোর্ট “বিদ্বেষমূলক” এবং ভুল তথ্যে ভরা। তারা বলেছে, মার্কিন এই কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করার কথা বিবেচনা করছে। আদানি গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। ভোগ্যপণ্য ছাড়াও তাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ জ্বালানি, বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর এবং অবকাঠামো নির্মাণের মত বড় বড় খাতে বিস্তৃত। ফোবস সাময়িকীর মতে, আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি এখন এশিয়ার এক নম্বর ধনী, এবং বিশ্বের ধনীদের তালিকায় তার অবস্থান চার নম্বরে। আদানি গ্রুপ দাবি করেছে, তারা সব ধরণের আইন অনুসরণ করে ব্যবসা করে। গ্রুপের প্রধান আইন কর্মকর্তা যতিন জালুনধোয়ালা বলেছেন, “(হিনডেনবার্গের) এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ভারতের শেয়ার বাজারে যে টালমাটাল অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে ভারতীয় নাগরিকরা অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক চাপে পড়েছেন।“ মি. জালুনধোয়ালা অভিযোগ করেছেন, আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই এই রিপোর্টে “প্রমাণ ছাড়া” বিভিন্ন তথ্য এবং অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, হিনডেনবার্গ তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই একাজ করেছে। তবে বৃহস্পতিবার হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, যেসব গুরুতর বিষয় তাদের রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে, সে বিষয়ে আদানি গ্রুপ কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়নি। হিনডেনবার্গ বলেছে, তাদের রিপোর্ট সঠিক এবং আদানি গ্রুপ মামলা করতে চাইলে তারা মোকাবেলা করবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
আদানি গ্রুপকে নিয়ে জালিয়াতির এসব অভিযোগে ওঠার পর ভারতে তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো প্রায়ই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে গৌতম আদানি ব্যবসায় অনেক অনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ এখন মুখ খুলতে হতে শুরু করেছেন। শিব সেনা দলের নেতা এবং পার্লামেন্ট সদস্য প্রিয়ংকা চতুর্বেদী টুইট করেছেন, “বিস্তারিত গবেষণা রিপোর্টটি জনসমক্ষে প্রকাশ হওয়ার পর সরকারের উচিৎ এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত দেখা।“ দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিবিদ কে. টি. রামারাও দাবি করেছেন, আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড তদন্ত করতে হবে। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতের শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি তেমনটা করবে সে সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে। “ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড কেবল তখনই ব্যবস্থা নেয় যখন কোনও তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাঠানো হয়। কিন্তু আদানির ব্যাপারে তেমনটি এখনো হয়নি,” বলেন ভারতের শেয়ার বাজার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনগভার্ন রিসার্চের প্রধান শ্রীরাম সুব্রামনিয়াম। ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে বিবিসি যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনও সাড়া পায়নি।

শুক্রবার বাজারে ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার ছাড়ার কথ ছিল আদানি গ্রুপের। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন অনেক বিনিয়োগকারী এখন সতর্ক অবস্থানে থাকতে পারেন। তবে মার্কিন এই গবেষণা রিপোর্টের প্রভাব শুধু আদানি গ্রুপ নয়, তার বাইরেও গিয়ে পড়তে পারে। ব্লুমবার্গের কলামিস্ট অ্যান্ডি মুখার্জি বলেছেন,“আদানি ছাড়াও সামগ্রিকভাবে ভারতের শেয়ার বাজারের বিশ্বস্ততা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।“ তার মতে, এর অন্যতম কারণ কারণ হলো ভারতের শেয়ার বাজার এখনও একদিকে আর্থিক ব্যবস্থার বৈশ্বিকীকরন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের ভেতরে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে। মি. মুখার্জি লিখেছেন, “জঞ্জাল দূর করার জন্য ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি রাস্তায় মানুষের ক্ষোভের জন্য অপেক্ষা করবে?”

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!