দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ মাঠে দুলছে পাকা সোনালি ধানের দোলা। বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি। চলছে ধান কাটার মহোৎসব। যশোরের অভয়নগর মনিরামপুর জুড়ে কৃষক-কৃষাণীরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অভয়নগরে এ বছর ধানের আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে। প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশে) ফলন হয়েছে প্রায় ৩০ মন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, এ বছর ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে। আবাদকৃত ৭০ শতাংশ জমির ধান পেকেছে। বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে কৃষকদের ধান ঘরে তুলতে কোন সমস্যা হবে না। আমরা ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায় মিটিং ও কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের বলেছি ৮০% ধান পাকলেই তা ঘরে তুলে ফেলতে হবে। ইতিমধ্যে ৭ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে, কৃষি প্রধান এ উপজেলার শতকরা ৯০ ভাগ কৃষক ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে মাঘ মাসের মাঝ পর্যন্ত এই ধান রোপণ করা হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ জমির ধান প্রায় পেকে গেছে। এখন কাটা চলছে। কৃষক পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সোনালি ধানের ম-ম গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন তারা। কথা বলার মতো যেন ফুসরত নেই তাদের। এসব ধান নিয়ে কৃষক কৃষাণী যেমন ব্যস্ত, তেমনি আনন্দও লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাদের মধ্যে। কৃষকের ধান কাটার আনন্দ গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমকেও হার মানাচ্ছে।
উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের বিকাশ বিশ্বাস বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় অন্য বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি ধানের ফলন হয়েছে।
তবে ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি একটু বেশি। মাথাপিছু শ্রমিককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দিতে হচ্ছে।
উপজেলার মশিয়াহাটি গ্রামের কৃষক অসিম মন্ডল বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে গোলায় তোলার চেষ্টা করছি আমরা।
ভাটবিলা গ্রামের কৃষক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, সরকারি সহযোগিতা ও কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার কারণে কৃষকদের মধ্যে ধানচাষে আগ্রহ বেড়েছে। পানির অভাব ও ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন পাবেন বলে তার আশা।
উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলি খাতুন বলেন, ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক যাতে লাভবান হয় সেজন্য তারা সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। যেখানেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেখানেই দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা।
এবার ধানে রোগবালাই ও চিটা কম হয়েছে। ধান পাঁকলেও গাছ এখনো শক্ত ও সতেজ রয়েছে।
তবে বাজারে শ্রমিক কম থাকায় কিছুটা হতাশ কৃষক। প্রয়োজনীয় শ্রমিক মিলছে না। যে পরিমাণে তাপদাহ তাতে শ্রমিক নিলেও তারা কাঙ্কিত কাজ করতে পারছে না, এমতাবস্থায় কিছুটা বিপাকে কৃষক।
সরকারী সহযোগীতার মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকের ধান কাটার ব্যবস্থা নেওয়ার আশা ব্যক্ত করেন কৃষকেরা।
খুলনা গেজেট/এনএম