খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ধনী-গরীবের ব্যবধান মিটাবে সালাম

মুফতি সাআদ আহমাদ

পবিত্র কোরআনে সালামের যৌক্তিক তাৎপর্যের পাশাপাশি এর প্রায়োগিক ক্ষেত্র এবং ব্যবহারিক রীতি নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। যেহেতু সালাম ইসলামের ঐ সকল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যা বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান। যে দৃশ্য তার দ্রষ্টাকে প্রভাবান্বিত করে। সালামের অভূতপূর্ব সম্ভাষণ রীতি মূহুর্তেই দর্শক মনে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা সালামের সাথে জড়িয়ে আছে ইসলামী সভ্যতার বিরাট অধ্যায়। যা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আমাদের শিখিয়েছেন।

বড় হয়ে ছোটকে আগে সালাম দেওয়া ইসলামের মহত্ব ও উদারতার একটি নিখাঁদ দৃষ্টান্ত। পরম আন্তরিকতা ও ভদ্রতার পরিচায়ক। যার মাধ্যমে সমাজের সব শ্রেণীকে সমানভাবে সামাজিক মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। যেখানে একজন সাধারণ মানুষকে আগে বেড়ে সালাম বা অভিবাদন জানানো তো অনেক পরের কথা বরং তার পক্ষ থেকে এজাতীয় কোন শব্দের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করাও হাস্যকর বিষয়। সেখানে বিদ্যা-বুদ্ধির গরিমা, ক্ষমতার বড়াই আর সম্পদের প্রাচুর্য দুপায়ে দলিত করে সমাজের দুর্বল, দরিদ্র এবং ছোটকে আগে অভিবাদন জানানই হলো সালামের নীতি।

প্রিয় নবীজি সা. ছিলেন মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠ পুরুষ। সৃষ্টির সেরাদের সেরা। কুল কায়েনাতের মধ্যমনি। যাকে মহান আল্লাহ সৃষ্টি কুলের জন্য রহমত বেশে প্রেরণ করেছেন। এতো শত মর্যাদার অধিকারী তিনি।

এতদাসত্বেও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে সালামের উদার নীতি শিক্ষা দিয়ে আদেশ করা হয়েছে, “যখন আপনার সাক্ষাতে মুমিনগণ আসেন তখন আপনি তাদের বলুন “সালামুন আলাইকুম”।(সুরা নিসা-৮৬)

ইসলামের মহত্ব ও উদারতা প্রকাশের জন্য এরচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর কি হতে পারে!

উক্ত আয়াতে ইসলামের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তিত্বের প্রতি খানিকটা আদেশের ভঙ্গিতে সম্ভাষণের এই নীতি তুলে ধরেছে। হে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন আপনার কাছে কোন মুমিন ব্যক্তি আসে। সে যেই হোক যেমনই হোক। কেবল ইমানদ্বারীর পরিচয়ই যথেষ্ট যে আপনি তাকে আগে অভিবাদন জানাবেন। সালামের পবিত্র বাক্য দ্বারা তাকে রহমতের দোয়ায় শামিল করে নিবেন।

এবিষয়ে আরো কার্যকরী দিকনির্দেশনা রয়েছে নবীজি সা. এর পবিত্র হাদিসে। যা সামাজিক উচু-নিচুর বৈষম্য নিরসনে সালামের ভূমিকা আরো স্পষ্ট করে।

উদাহরণস্বরুপ দুই ব্যক্তির রাস্তায় সাক্ষাত হল। একজন বাহনারোহী এবং অপরজন পদাতিক। এবার একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করুন। এখানে একটি সুক্ষ বাস্তবতা অনুভূত হবে যে, অবস্থানগত দিক থেকে আরোহী ব্যক্তি পদাতিক ব্যক্তির তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। সে উচু বাহনের উপর আর পদাতিক তার পায়ের কাছে। সুতরাং ইসলাম আরোহীকে আদেশ করেছে যে, তুমি আগে বেড়ে পদাতিক ব্যক্তিকে সালাম করবে।যাতে সে তোমার তুচ্ছতার পাত্র না হয় এবং তুমি অহংকারের স্বীকার না হও। (বুখারী-৬২৩৩)

এটাই সালামের নীতি। শ্রেষ্ঠ সভ্যতার শিক্ষা। শিক্ষক ছাত্রের সালামের অপেক্ষা করবে কেন? প্রিয় নবীজি শিক্ষক ছিলেন। তিনি আগে সালাম দিতেন। কর্মকর্তা হয়ে কর্মচারীকে সালাম দিতে সংকোচ কিসের? গৃহকর্তা হয়ে অধিনস্তদের সালাম দিতে কিসের আপত্তি? আগে সালাম দেওয়া কেবল ছোটদের দায়িত্ব এ ধারণা ঠিক নয়। বড় হয়েও ছোটকে সালাম দেওয়া যায়।

(লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া, ফুলবাড়িগেট, খুলনা)।

খুলনা গেজেট/ এস আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!