ড্যারিল মিচেল যখন ৩ রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন, তখন নিউজিল্যান্ডের স্কোর বোর্ডে ৪২৩ রান। উইকেট গেছে ৫টি। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিন ব্যাট হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। আজ (সোমবার) দ্বিতীয় দিনের স্কোর বোর্ডে রান এলেও লাইন-লেন্থ মেপে বল করছে বাংলাদেশি পেসাররা। তাতে সফলতার দেখা মিলেছে। প্রথম দিন যেখানে মাত্র একটি উইকেট পড়েছিল, সেখানে আজ প্রথম সেশনে টাইগাররা তুলে নিয়েছে ৪ উইকেট।
আগের দিন ১ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা ব্ল্যাকক্যাপরা প্রথম সেশনে তুলেছেন ৭৪ রান। সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ডেভন কনওয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন ১০৯ রানে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্বিশত তুলে নিয়েছেন অধিনায়ক লাথাম। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে নিউজিল্যান্ড দলের সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ৪২৩ রান। সেশনের শেষ বলে মিচেল আউট হন ৩ রান করে। লাথাম ২১৫ রান নিয়ে দিনের দ্বিতীয় সেশন শুরু করবেন।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান লাথাম ১৮৬ এবং কনওয়ে ৯৯ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন। সেঞ্চুরি পেতে অপেক্ষা করতে হয়নি ফর্মের তুঙ্গে থাকা কনওয়েকে। এবাদত হোসেনের করা লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের আলগা বলটি ব্যাট ছুঁয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তাতে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান কনওয়ে। দারুণ ফর্মে থাকা এ ব্যাটসম্যান প্রথম টেস্টেও সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ৫ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরির সঙ্গে ২টি হাফ সেঞ্চুরিও আছে তার।
তবে শতক হাঁকিয়ে সেই ইনিংসটি আর টানতে পারেননি। দিনের ষষ্ঠ ওভারে শরিফুলের বল আলতো টোকায় খেলেছিলেন লাথাম। বল খানিকটা দূরে যাওয়ায় ১ রানের জন্য কল করেন কিউই অধিনায়ক। কনওয়ে সেই ডাকে সাড়া দেন। কিন্তু মিরাজ ছিলেন ক্ষিপ্র। কভার থেকে দৌড়ে বল এক হাতে লুফে সরাসরি থ্রোতে ভাঙেন উইকেট। কনওয়ের ইনিংস থেমে যায় সেখানেই। ১৬৬ বলে ১০৯ রান করেন কনওয়ে। ভাঙে ২১৫ রানের জুটি।
কনওয়ে আউট হওয়ার আগে গড়ে গেছেন একাধিক রেকর্ড। ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ টেস্টে কমপক্ষে তিনটি শতক ছিল এর আগে মাত্র চারজনের, পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সে তালিকায় নাম তোলেন তিনি। লাথাম ও কনওয়ের দ্বিতীয় উইকেটে ২১৫ রান পার্টনারশিপ বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ছিল কনওয়ে আর উইল ইয়াংয়ের। সিরিজের প্রথম টেস্টে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে হয়েছিল সেটি।
কনওয়ের আউটের পর মাঠে নামেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা রস টেলর। তিনি ব্যাটিংয়ে নামতেই স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকরা দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তাকে দেন গার্ড অব অনার। দুই পাশে দাঁড়িয়ে টেলরকে সম্মান জানান মুমিনুল, লিটন, সোহানরা। তবে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি। এবাদতের ফুলার লেন্থ বলে ক্রস করেছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ঠিকমতো টাইমিং হয়নি। স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নেন শরিফুল। ৩৯ বলে ২৮ রান করে টেলর ফিরলেন সাজঘরে।
তার আগেই অবশ্য ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান লাথাম। দিনের ১১তম ওভারে তাসকিনের হাফভলি বলে দারুণ শট খেলেন। বল চলে গেল সীমানায়। লাথাম ছুঁয়ে ফেলেন মাইলফলক। সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তার পঞ্চম ডাবল। তাতে কেন উইলিয়ামসনকে ছুঁলেন বাঁহাতি ওপেনার। ৩০৫ বলে ৩২ বাউন্ডারিতে লাথাম পৌঁছান ডাবল সেঞ্চুরিতে।
প্রথম ঘণ্টায় ১২ ওভার খেলে স্কোর বোর্ডে ৫১ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ড। সেশনের দ্বিতীয় ঘণ্টার শুরুতে ডাবল শতক হাঁকানো লাথামকে ফেরানোর পথ তৈরি করেছিলেন তাসকিন। ইনিংসের ১০৭ নম্বর ওভারের তৃতীয় বলটি লাথামের শরীর তাক করে বাউন্সার ছোড়েন এই পেসার। অনিচ্ছা শর্তে খেলতে বাধ্য হন লাথাম। তাসকিন নিজের জায়গা থেকে দৌড়ে গিয়ে তালুবন্দি করলেও শেষপর্যন্ত হাতে জমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হন।
লাথামকে এ যাত্রায় ফেরানো না গেলেও নতুন ব্যাটসম্যান হ্যানরি নিকোলসকে সুবিধা করতে দেননি এবাদত। ডানহাতি পেসারের বল ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন নিকোলস। বল তার ব্যাটের চুমু খেয়ে যায় উইকেটের পেছনে। বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। মুমিনুল রিভিউ নেন। তাতে মিলে যায় সাফল্য। শূন্য রান করে আউট নিকোলস।
পরে সেশনের শেষ বলে মিচেলকে ফেরান শরিফুল। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েও লাভ করতে পারেননি। উইকেটের পিছনে সোহানের হাতে ধরা পড়েন ৩ রান করে। এতে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড দলের সংগ্রহ ৪২৩ রান। আগে দিনে নখদন্তহীন বোলিং করা বাংলাদেশি পেসারদের দাপটে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সফরকারীরা।
খুলনা গেজেট/ টি আই