১৭১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে রাকিম কর্নওয়ালের শিকার হয়েছেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই বলের ব্যবধানে দুজন ডাক মেরেছেন। তামিম ৪ বল খেলে এলবিডাব্লিউ হন, আম্পায়ারের আউটের সিদ্ধান্তে রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি তিনি। আর শান্ত দুই বল খেলে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের ক্যাচ হন স্লিপে। উইন্ডিজের বিপক্ষে স্কোরবোর্ডে ১ রান তুলে দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: প্রথম ইনিংস- বাংলাদেশ: ৪৩০, ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫৯; দ্বিতীয় ইনিংস- বাংলাদেশ: ১৩ ওভারে ৩০/২ (সাদমান ২*, মুমিনুল ২৭*)
মিরাজের নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ১৭১ রানের লিড
ব্যাট হাতে ১০৩ রান করে বাংলাদেশকে রান-পাহাড়ে রাখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বল হাতেও তৃতীয় দিন দুর্দান্ত এই ডানহাতি স্পিনার। চা বিরতির আগে শেষ বলে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের বিপজ্জনক উইকেট নেন। ফিরে এসে কেমার রোচ (০) ও রাকিম কর্নওয়ালকে (২) ফেরান। বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার পথে থাকা উইন্ডিজকে মিরাজ বড় ধাক্কা দেন ৭ বলে ৩ উইকেট নিয়ে। পরে তাইজুল ইসলাম ৯৭তম ওভারে জোমেল ওয়ারিকানকে (৪) বোল্ড করে সফরকারীদের গুটিয়ে দেন।
২৩ বলে মাত্র ৬ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের ৪৩০ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে তারা অলআউট ২৫৯ রানে। তাতে ১৭১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামবে স্বাগতিকরা।
মিরাজ সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন ২৬ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে। নাঈম হাসান, তাইজুল ও মোস্তাফিজুর রহমান দুটি করে উইকেট পান।
শেষ সেশনের শুরুতেই মিরাজের জোড়া আঘাত
৫ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই সেট ব্যাটসম্যান জশুয়া ডা সিলভা ও জার্মেইন ব্ল্যাকউডের উইকেট পায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ব্ল্যাকউড বিদায় নিলে চা বিরতিতে যায় দুই দল। নতুন ব্যাটসম্যান কেমার রোচ নেমে শেষ সেশনের তৃতীয় বলেই আউট হন ডানহাতি অফস্পিনারের বলে। ডিপ মিডউইকেটে বদলি ফিল্ডার মোহাম্মদ মিথুনের ক্যাচ হন ডাক মেরে।
মিরাজ তার পরের ওভারের প্রথম বলে রাকিম কর্নওয়ালকে বোল্ড করেন ২ রানে, এটি ছিল বাংলাদেশি স্পিনারের চতুর্থ উইকেট।
৫ বলে ২ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে উইন্ডিজ
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি ও জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে শতরানের জুটি গড়ার পথে ছিলেন জশুয়া ডা সিলভা। কিন্তু কোনোটাই হলো না। ক্রিজে শক্ত প্রতিরোধ গড়া ৯৯ রানের এই জুটি ভেঙে দিলেন নাঈম হাসান। ১৪১ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৪২ রান করে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি হন ডা সিলভা।
এই জুটি যেন প্রাণ ছিল ব্ল্যাকউডের কাছে। তাই তো ডা সিলভার বিদায়ের তিন বল পর তিনিও উইকেট হারান একইভাবে। এই ব্যাটসম্যানের উইকেটটি অবশ্য পান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৪৬ বলে ৯ চারে ৬৮ রান করে লিটনের ক্যাচ হন ব্ল্যাকউড। তার বিদায়ে শেষ হয় দ্বিতীয় সেশন। ৫ বলে ২ উইকেট নিয়ে চা বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ, শেষ সেশনের আগে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৫৩ রান।
বাংলাদেশের সামনে ব্ল্যাকউডের প্রতিরোধ
প্রস্তুতি ম্যাচে দুই অঙ্কের ঘরে রান করতে না পারলেও জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। তার প্রতিদান ভালোই দিয়ে যাচ্ছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। নিউ জিল্যান্ড সফরে দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করা ব্ল্যাকউড প্রতিরোধের দেয়াল গড়েছেন বাংলাদেশের বোলারদের সামনে। ১০৬ বলে ৭ চারে ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি করেছেন ২৯ বছরের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
ক্রিজের অন্য প্রান্তে থাকা জশুয়া ডা সিলভার সঙ্গে পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিতে দলীয় স্কোর দুইশ ছাড়িয়ে নিয়েছেন। ব্র্যাথওয়েট আউট হলে মাঠে নামেন ব্ল্যাকউড। কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে তার জুটি বেশি লম্বা হয়নি, ২৪ রানের। ১৫৪ রানে ৫ উইকেট হারানো উইন্ডিজকে টেনে তুলছেন তিনি ডা সিলভাকে সঙ্গে করে।
তিন স্পিনারের উদযাপনে শেষ প্রথম সেশন
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমান-সমান। তিন স্পিনার তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান সফরকারীদের তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন। আগের দিন উইন্ডিজের দুটি উইকেটের সবগুলো নেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
দিনের প্রথম বলেই ১৭ রানে অপরাজিত থাকা এনক্রুমাহ বোনারকে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানান তাইজুল। এরপর বিপজ্জনক হয়ে ওঠা অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ৭৬ রানে বোল্ড করেন নাঈম। যদিও হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। তবে ফিফটি করতে ব্যর্থ হন পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা কাইল মেয়ার্স। শুরু থেকে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন তিনি। তাকে ৪০ রানে থামান মিরাজ।
১৫৪ রানে ৫ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এগিয়ে নিচ্ছেন জার্মেইন ব্ল্যাকউড ও জশুয়া ডা সিলভা। লাঞ্চের আগে এই পাঁচ ব্যাটসম্যান মিলে তুলেছেন ১১৪ রান। ব্ল্যাকউড ৩৪ ও ডা সিলভা ১২ রানে অপরাজিত আছেন।
মেয়ার্সকে হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত করলেন মিরাজ
স্পিনাররা জ্বলে উঠেছেন তৃতীয় দিন সকালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নতুন দিন প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারিয়েছে, যার সবগুলো শিকার করেছেন স্পিনাররা। তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানের পর মেহেদী হাসান মিরাজও উইকেটের খাতা খুলেছেন।
অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের পর হাফ সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন কাইল মেয়ার্স। কিন্তু তাকে ১০ রানের আক্ষেপে পোড়ালেন মিরাজ। এই ডানহাতি স্পিনারের কাছে এলবিডাব্লিউ হয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৬৫ বলে ৭ চারে ৬৪ রান করেন। জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে তার জুটি ছিল ২৪ রানের।
বড় উইকেট নিলেন নাঈম
অপ্রতিরোধ্য ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ফিরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের স্পিনার নাঈম হাসান। নিজের সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ককে বোল্ড করেন তিনি। ৮৬ বলে ফিফটি করার পর উইন্ডিজ ওপেনার থেমেছেন ৭৬ রানে। ১১১ বলে ১২টি চারে এই রান করেন ব্র্যাথওয়েট। কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তিনি।
প্রথম বলেই উইকেট শিকার
ঘূর্ণি জাদুতে বাংলাদেশের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হয়েছে উদযাপন দিয়ে। শুক্রবার চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেছে দিনের প্রথম বলেই। হাঁটুর অস্বস্তির কারণে ফিল্ডিংয়ে নামেননি বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। তবে আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম শুরু করেছেন উইকেট নিয়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যান এনক্রুমাহ বোনারকে ফেরান ২৮ বছর বয়সী স্পিনার। ৫৯ বল খেলে ১৭ রানে ফার্স্ট স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান, ভাঙে ৫১ রানের তৃতীয় উইকেটের জুটি। দুই ওভার পর অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ৮৬ বল খেলে ফিফটির দেখা পান।
উইন্ডিজকে দমিয়ে রাখতে মাঠে বাংলাদেশ
মেহেদী হাসান মিরাজের শতক এবং আরও দুটি ফিফটিতে রান-পাহাড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে চ্যালেঞ্জিং স্কোর করে এখন তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকাতে চায়। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে শুরুটা ভালোই হয়েছিল স্বাগতিকদের। স্পিন স্বর্গের আভাস দেওয়া পিচে মোস্তাফিজুর রহমানের গতি ক্যারিবিয়ানদের চমকে দিয়েছিল, কিন্তু তারা প্রতিরোধ গড়েছে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের ব্যাটে।
চার স্পিনারদের প্রত্যেকে বল করেছেন। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। সাকিব আল হাসান ৬ ওভারে ১৬ রান দিয়েও পাননি উইকেটের দেখা। মিরাজ বল হাতে ছিলেন নিষ্প্রভ, ৭ ওভারে ২ মেডেনসহ ২৪ রান খরচ করেছেন। ৫ ওভারে ৯ রান দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম ও ৩ ওভার করে ৭ রান খরচ করেন নাঈম হাসান।
তবে নতুন সকালে স্পিনাররা জ্বলে উঠবে এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা। স্বাগতিকদের ৪৩০ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ করেছে ২ উইকেটে ৭৫ রানে।