সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমে’ অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারও বন্ধ। এতে অচল হয়ে পড়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতির এই কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে পালন করে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমিতিগুলোও একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনের মাঠে সরব। প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি চালানোর ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষকরা বলছেন, এই পেনশন স্কিম বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কর্তনের মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের মর্যাদা হনন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মনস্তাত্তিক সংকট তৈরির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরাসারি উচ্চতর পদে নিয়োগ হয়, এমনকি অভ্যন্তরীণ প্রার্থীও নতুনভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। এতে যদি কোনো শিক্ষক উচ্চতর পদে সরাসরি বা নতুন নিয়োগ পান, তাহলে তাঁকে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা ত্যাগ করে সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হতে হবে। এতে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহী হবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুক্তি, একজন অধ্যাপক বিদ্যমান ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক পান ৮০ লাখ টাকার ওপরে। কিন্তু সর্বজনীন পেনশনে তা নেই। তবে বর্তমানে একজন অধ্যাপক মাসিক পেনশন পান প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে তিনি পাবেন এক লাখ ১৩ হাজার টাকা। তবে যার অর্ধেক ৬২ হাজার টাকা নিজের বেতন থেকে কর্তনের জন্য পাবেন।
এ ছাড়া বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন পান। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে পেনশনার আজীবন পেনশন পেলেও তাঁর মারা যাওয়ার পর নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। এতে নমিনি বৃদ্ধ বয়সে একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। বিদ্যমান পেনশনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ ৬৫ বছর, কর্মকর্তাদের ৬২ বছর ও কর্মচারীদের ৬০ বছর। কিন্তু সর্বজনীন পেনশনে অবসরকালীন বয়স ধরা হয়েছে ৬০ বছর। এতে বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থা সর্বজনীন পেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ জন্য তা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
কিন্তু শিক্ষকদের এই সর্বাত্ম কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব বিভাগের সব ক্লাস এবং অনলাইন ক্লাস বন্ধ ছিল। সান্ধ্যকালীন ক্লাস হয়নি। সব পরীক্ষা বর্জন এবং মিডটার্ম, ফাইনাল, ভর্তি পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষা হয়নি। বিভাগীয় চেয়ারম্যান অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ এবং একাডেমিক কমিটি, সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা হয়নি। অনুষদের ডিনরা ডিন অফিস, ভর্তি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। কানো সিলেকশন বোর্ডের সভা হয়নি। বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা অফিস, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখেছিলেন।
বিভিন্ন গবেষণাধর্মী সেন্টারের পরিচালকরা কোনো সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচি গ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন। বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা প্রাধ্যক্ষ অফিস বন্ধ রেখেছেন। প্রধান গ্রন্থাগারিক কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিও বন্ধ রেখেছিলেন।
খুলনা গেজেট/এইচ