মানিকগঞ্জ-রাজবাড়ীকে সড়কপথে সংযুক্ত করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে তাতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। ঢাকার দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকো এ কথা জানিয়েছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, প্রয়োজন বিবেচনা করেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তার সরকার।
ঢাকার নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের ইতো নাওকো বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে একসময় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হবে। জাপান সরকার ও জাইকা সরকারের নির্মাণপ্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বিবেচনার অবস্থানে থাকবে।’‘আমরা বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের সহযোগিতা প্রস্তাবের সুযোগ নেব’, বলেন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে ঋণ চুক্তি করা হয়, তা পরে হয় জাইকার সঙ্গেও। পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ালে জাইকাও সরে যায়। পরে সরকার নিজ অর্থে সেতু নির্মাণ করে।
এই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার আগেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুটি উদ্বোধনের তিন দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনই দ্বিতীয় সেতু শুরু করতে চাইছেন না তিনি। একটি বড় প্রকল্প শেষ না হতেই আরও একটি বড় প্রকল্পের কাজে হাত দেয়া কঠিন বলে মনে করেন তিনি। প্রয়োজনের নিরিখে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে বলেও জানিয়ে দেন সরকারপ্রধান।
জাপান সরকারের অবস্থান জানিয়ে ঢাকায় দেশটির দূত বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে এটি (পদ্মা সেতু) অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও সফল হবে। সুতরাং দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হবে এটিও বাস্তবতা।’ইতো বলেন, ‘বাংলাদেশে মানসম্মত অবকাঠামো নির্মাণকাজে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা থাকলে টোকিও ভালো প্রযুক্তি দিতে প্রস্তুত রয়েছে। জাপান এ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে ছোট ও বড় ১৩৪টি সেতু নির্মাণে সহযোগিতা করেছে।’
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান ঢাকায় জাপানের প্রতিনিধি। তিনি বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় একটি চমৎকার মাইলফলক। আর এটি বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে নির্মাণ শেষ হয়েছে।
‘চলতি মাসে পদ্মা সেতু এবং বছরের শেষ নাগাদ মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উদ্বোধনের নজির সৃষ্টি করে ২০২২ সাল বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কথা স্মরণ করে নাওকো বলেন, ‘তিনি পদ্মা সেতু ও রূপসা সেতু দুটি সেতুতে সহযোগিতার জন্য জাপানের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি পদ্মা সেতুর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে এবং রূপসা সেতু নির্মাণ করেছে।’
পদ্মা সেতুতে জাপান যুক্ত থাকতে পারেনি বলে দুঃখও প্রকাশ করেন দেশটির দূত। বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে জাইকা পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের অংশ হতে পারেনি। যদিও এটা জাপান সরকারের আগ্রহ ছিল।’
নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন ইতো নাওকো। বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ নিজে থেকে কতটা করতে সক্ষম।’
খুলনা গেজেট/ আ হ আ