দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে দেশের দ্বিতীয় সামদ্রিক বন্দর মোংলা। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধাপে ধাপে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে এ বন্দরটিতে। এক সময়ের মৃত বন্দরটি আজ দক্ষিণ এশিয়ার সমুদ্র অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিবছরই বন্দরে জাহাজ আগমনের রেকর্ড গড়ছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে মোংলা বন্দর ব্যবহারের পরিধি আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে। তিনদেশের বাণিজ্যিক দল কয়েকবার মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে বন্দর ব্যবহারে আগ্রহের বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছে। বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দলের মতে, আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে মোংলা বন্দরের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলে গত ১২ বছরে ৫০ টির অধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলমান ১০ টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আশা করা যায় ২০২১- ৪০ সালের মধ্যে আরও ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে মোংলা বন্দর।
ভবিষ্যতে যে ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা বন্দর কর্তৃপক্ষের রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের আওতায় বার্ষিক ১ দশমিক ৫০ কোটি টন কার্গো, ৪ লাখ টিইউজ কন্টেনাইনার হ্যান্ডলিং করার জন্য ইকুইপমেন্টসহ কন্টেইনার টার্মিনাল, কন্টেইনার ডেলিভারী ইয়ার্ড নির্মাণ, সরকারি অর্থায়নে দুটি জেটি নির্মাণ, বন্দর চ্যানেলে নিয়মিত সংরক্ষণ ড্রেজিং ও নাব্যতা বজায় রাখার জন্য ১টি ট্রেলিং সাকশান হপার ড্রেজার সংগ্রহ, বন্দর চ্যানেলে নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের জন্য বিভিন্ন ধরনের লাইটেড বয়া এবং মুরিং সংগ্রহ, আধুনিক কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, বন্দরে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি পরিকল্পিত উপায়ে সংরক্ষণের জন্য জয়মনিরগোলে কার ইয়ার্ড নির্মাণসই একই এলাকায় ইকুইপমেন্টসহ ১টি মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং সমতা বৃদ্ধির আকরাম পয়েন্টে দুটি ভাসমান জেটি নির্মাণ, হিরণ পয়েন্টে পাইলট ষ্টেশনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং জ্যাফর্ড পয়েন্টে লাইট হাউজ এ্যাটেনডেন্টের জন্য ভবন নির্মাণ, পশুর নদীর নাব্যতা দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য নদী শাসন কার্যক্রম গ্রহণ, উন্নত ও আধুনিক লাইট টাওয়ার নির্মাণ, হিরণ পয়েন্ট ও অন্যান্য স্থানে স্বল্প সময়ে গমন করে দ্রুত উদ্ধার কাজসহ চ্যানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হেলিকপ্টার ও যাবতীয় সু্বিধাদিসহ হেলিপ্যাড নির্মাণ, বার্দিং টাগ, ফায়ার ফাইটিং টাগ, মাদার সার্ভে ভেসেল, পাইলট ডেসপাস বোট, তেলের ট্যাংকারসহ ৪০-৫০ টি জলযান সংগ্রহ, দূর্ঘটনা কবলিত জলযান ও জলবল দ্রুত উদ্ধার করার জন্য একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ধারকারী জলযান সংগ্রহ এবং বন্দরের কার হ্যান্ডলিং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কার ক্যারিয়ার সংগ্রহ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দরে ১২ বছরে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হয়েছে তাতে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের সীমান্ত অঞ্চল বিশেষ করে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত অঞ্চলের মালামাল পরিবহনে মোংলা বন্দর আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই