অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সঙ্কট থেকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দাবি করে দেশবাসীকে বিক্ষোভ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশে অস্থিরতার মধ্যে সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান বলে শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্র টাইমস জানিয়েছে। টেলিভিশনে প্রচারিত এই ভাষণে মাহিন্দা বলেন, “আপনারা রাস্তায় যত বিক্ষোভ করবেন, ডলার সংস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের তত ক্ষতি হবে।”
যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের বেশি, যে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি টানা কয়েক বছর ৬ শতাংশে ছিল, সেই শ্রীলঙ্কা এখন চুপসে গেছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন ও রেমিটেন্সে কোভিড মহামারীর কারণে ধস নামার পর ইউক্রেইন যুদ্ধে শুরু হলে বিদেশি মুদ্রার তীব্র সঙ্কটে পড়ে দেশটি। আমদনি ব্যয় মেটানোর ডলার না থাকার দেশটি পড়ে জ্বালানি সঙ্কটে, তাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কাগজের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া। দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে। গণঅসন্তোষের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন জোটেও ভাঙন দেখা দিয়েছে, আর তাতে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন জোট।
গোটাবায়ার ভাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মাহিন্দা বিক্ষোভরত দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আপনার যে সংস্কারের দাবি করছেন, তা করা এখন প্রথম কাজ নয়। প্রথম কাজটি হল এই সঙ্কট সামাল দেওয়া।” তিনি বলেন, মহামারীর পরপরই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়েছি আমরা।
“অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে, সেটা জানার পরও আমরা লকডাউন দিয়েছিলাম। আর সেই কারণেই আমাদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে পতন ঘটেছে।”
ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া ও নিজে এখন নিজেদের প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্কট উত্তরণের পথ খোঁজার চেষ্টায় ব্যয় করছেন বলে জানান মাহিন্দা।
বর্তমান সঙ্কটের জন্য পূর্বর্তী সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “২০১০ সালে যুদ্ধ (তামিল টাইগারদের নির্মূল) জয়ের পর আমরা ভোটে বিজয়ী হই। আমি তখন বলেছিলাম, আপনাদের বিদ্যুৎ দেব। আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সরকার তা এগিয়ে নেয়নি। তারাই এই সঙ্কটের জন্য দায়ী।”
চলমান সঙ্কটের সমাধান এক-দুই দিনে হবে না মন্তব্য করে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বানও জানান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।