পরনে নীল রঙের টি-শার্ট ও খাকি প্যান্ট। পায়ে স্পোর্টস স্যান্ডেল। দুই হাত দুই খুঁটির সঙ্গে বাঁধা। আধমরা যুবকটি শরীরের ভার বহন করতে না পেরে পেন্ডুলামের মতো ঘুরছিল। তাকে ঘিরে গান গেয়ে গেয়ে নাচছিল পাঁচ ছয়জন যুবক। পেছনে একজনের হাতে লাঠি। তাতে স্পষ্ট বুঝা যায়, পিটিয়ে আধমরা করে তাকে দুই খুঁটির সঙ্গে ঝুলানো হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলের অন্তত এক কিলোমিটার দূর থেকে ওই যুবকের লাশ পাওয়া যায়।
নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায়। গত ১৪ আগস্ট এই ঘটনা ঘটে। গতকাল রোববার ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি প্রকাশ্য আসে।
নৃশংসভাবে হত্যার শিকার যুবক হলেন মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভূঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। থাকতেন নগরের কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। নগরের ফলমণ্ডির একটি দোকানে চাকরি করতেন তিনি।
এ ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তখনও কেউই জানতেন না শাহাদাতকে এভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা হয়। ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পরলে শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তারের নজরে আসে। মারধরের শিকার ব্যক্তিটি শাহাদাত বলে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু কি কারণে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তা এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।
মামলার এজাহারে শাহাদাতের চাচা উল্লেখ করেন, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সারাদিন পর তার স্ত্রী শারমিন সন্ধ্যার দিকে ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজার নিথরদেহ পড়ে আছে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, গত ১৪ আগস্ট প্রবর্তক এলাকা থেকে শাহাদাত নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার চাচা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, শাহাদাতকে স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে কিছু যুবক গান গেয়ে গেয়ে পেটাচ্ছে। যারা শাহাদাতকে হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের খুব দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।