যুগপৎ আন্দোলন কিংবা জোটে না থাকলেও বিএনপিকে অনুসরণ করে কর্মসূচি দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা।
চলতি বছরের শুরুতে দূরত্ব সৃষ্টি হলেও গত ২৮ অক্টোবর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিএনপির মতো হরতাল-অবরোধের ডাক দিচ্ছে জামায়াত। গত ১৮ অক্টোবরের জনসমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো পরবর্তী সময়ে একে একে একই কর্মসূচি দেয়। সে সময় জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছিলেন, যুগপৎ আন্দোলনে না থাকায় মহাসমাবেশের পরিকল্পনা নেই। আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার আন্দোলনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নিহত দলীয় নেতাকর্মী স্মরণে প্রতিবছরের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে পাঁচ দিনের মধ্যে অবস্থানে পরিবর্তন আসে।
বিএনপি ও ৩৬টি সমমনা দলের মতো জামায়াত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়। সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জামায়াতকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু ২৭ অক্টোবর রাতে সরকারের অবস্থানে পরিবর্তন আসে। পরদিন ‘অলিখিত অনুমতি’তে নেতাকর্মীর বিপুল জমায়েত ঘটিয়ে রাজধানীর আরামবাগে মহাসমাবেশ করে জামায়াত। আধা কিলোমিটার দূরে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা হলেও জামায়াতের কর্মসূচি ছিল সংক্ষিপ্ত এবং তুলনামূলক নির্বিঘ্ন। জামায়াত বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতার দীর্ঘদিনের গুঞ্জনের পালে আরও হাওয়া লাগে।
যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও বিএনপির হরতালের দিনে ২৯ অক্টোবর জামায়াত হরতাল ডাকে। পরে সরকার পতনের এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর মতো জামায়াতও তিন দফা অবরোধ ডেকেছে। গত ২৬ অক্টোবর প্রথমবারের মতো ‘এক দফার আন্দোলন’ কথাটি ব্যবহার করে জামায়াত।
বিপদে বিএনপিকে পাশে না পাওয়ার অভিযোগে গত জানুয়ারিতে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া জামায়াত ২৮ অক্টোবর থেকে কেন অভিন্ন কর্মসূচিতে– এ প্রশ্নে দলটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, গত জুলাই থেকেই অনানুষ্ঠানিক আলাপ ছিল। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে যার মতো আন্দোলন করেছে, তবে যোগাযোগ রয়েছে। হরতাল-অবরোধ ঘোষণার আগে বিএনপির দিক থেকে প্রস্তাব আসে। জামায়াতও অভিন্ন কর্মসূচি দেয়। আগামী মাসগুলোতে এর ব্যতিক্রম হবে না।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
জামায়াতের একাধিক নেতা বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর যে মাত্রায় ধরপাকড় করা হচ্ছে, নেতাকর্মীর ওপর হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে, এর পর আর পিছু হটার সুযোগ নেই। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা বা নির্বাচনের কোনো পথ খোলা নেই; সুযোগও নেই। দলের নেতাকর্মী তা মানবে না। তাই দূরত্ব থাকলেও বিএনপি যে কর্মসূচি দিচ্ছে, তা অনুসরণ করে যেতে হবে; তা কারও পছন্দ হোক বা না হোক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভিন্ন কর্মসূচি দেওয়ার সুযোগ নেই। ভিন্ন কিছু করতে গেলে নেতাকর্মী ছাড়াও দেশে-বিদেশে ভুল বার্তা যাবে। অস্তিত্ব সংকট তৈরি হবে। টানা হরতাল-অবরোধের কারণে বিএনপির যা হবে, জামায়াতেরও তাই হবে।
হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত নিজ নামে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় বেনামে বা অন্য দলের প্রতীক নিয়ে ভোটে যাওয়ার গুঞ্জন সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন জামায়াতের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। আগামী ১২ নভেম্বর আপিল বিভাগে জামায়াতের নিবন্ধন মামলার শুনানি হবে। দলের এক নেতা বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি ছাড়া আদালত থেকে নিবন্ধন ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফেরত পেলেও আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ অসম্ভব। বাংলাদেশে জামায়াতকে শক্তিশালী হতে দেবে না ভারত।