সুন্দরবনের দুবলার চরে এবারও অনুষ্ঠিত হবে না ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। সেখানে মেলার কোনো আয়োজন হবে না। তবে নির্দিষ্ট সময়ে সোনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য পূণ্যস্নান বা রাস পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার রাস মেলা উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খুলনার সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কাযালয়ে ওই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাস পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা ও ট্যুরিস্ট অপারেটরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবছর রাস মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষ সুন্দরবনের দুবলার চরে যান। ওই তালিকায় থাকেন হিন্দু, মুসলমান থেকে শুরু করে সব সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে গতবছর কোভিড পরিস্থিতির কারণে শুধু পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকেই সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে রাস পূজার সময় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানায় কাউকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি বন বিভাগ।
চলতি বছর রাস পূজা অনুষ্ঠিত হবে ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর। এর মধ্যে ১৭ নভেম্বর সকালে বাগেরহাটের মোংলা থেকে রাস পূজা উপলক্ষে সুন্দরবনের আলোরকোলের উদ্দেশ্যে নৌযানে করে যাত্রা শুরু করবেন আয়োজকরা। সাতক্ষীরা ও খুলনার নির্দিষ্ট নৌপথ ব্যবহার করে সেখানে যেতে পারবেন পূর্ণার্থীরা। ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পূজা আর ১৯ নভেম্বর প্রথম প্রহরে স্নান অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ফিরতে শুরু করবেন তাঁরা।
আলোচনা সভায় পূজা উদযাপন কমিটি ও ট্যুর অপারেটর অব সুন্দরবন কমিটির পক্ষ থেকে রাস পূজায় সব ধর্মাবলম্বীদের সেখানে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তাঁরা দাবি করেন, এদেশ সব সম্প্রদায়ের মানুষের দেশ। রাস মেলা উপলক্ষে সেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষই সমাগত হন। ওই উপলক্ষে মেলাস্থল পরিণত হয় এক মিলন মেলায়। প্রতিবছর মেলায় যাওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকেন। শুধু দেশ নয় বহিবিশ্বেও রাস মেলা এখন অন্য বার্তা বহন করে। বিদেশিরাও মেলায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে পূজায় যাওয়ার অনুমতি দিলে মানুষে মানুষে সেই মিলবন্ধন আর থাকবে না।
ওই ব্যাপারে খুলনা আঞ্চলিক বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তাছাড়া সরকার থেকেও পূজায় পূর্নার্থীদের বাইরে কারো যাওয়ার জন্য অনুমতি নেয়। এ কারণে সেখানে অন্য ধর্মের লোক যেতে পারবেন না।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথা চিন্তা করে গত কয়েক বছর থেকে আলোরাকোলে রাস পূজা উপলক্ষে মেলা না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গত দুই বছর কোভিড ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তা বাস্তবায়নে অনেকটা সফল হয়েছে বন বিভাগ। গতবছর প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেছিলেন, যে স্থানে রাস মেলা হয় সেটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষ সেখানে যাওয়ার ফলে একদিকে যেমন বণ্যপ্রাণীর ক্ষতি হয় অন্যদিকে ওই মানুষের ফেলা দেওয়া আবর্জনায় ক্ষতি হয় বনের। এতে জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু মানুষ সেখানে শুধু পূজা ও স্নান করতে যায়। এ কারণে ওই সময় শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকরাই সেখানে যাওয়ার অনুমতি পাবেন। অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের সেখানে গিয়ে বনের পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। বনে মানুষের সমাগম যত কম হবে বন তত বেশি ভালো থাকবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই