যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধকে ঢাল হিসাবে অনেকটা রক্ষা করে গাছ। এবার চর বনায়নের গাছ কেটে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্যামনগর উপজেলার পদদ্মপুকুরে ইউনিয়নের বন্যতলা গ্রাম এলাকায় চর বনায়নের এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ সংষ্কারের মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত চর বনায়নের ৬০/৭০টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গাছ কাটা বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বন্যতলা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেড়িবাঁধ রক্ষায় ঢাল হিসেবে কাজ করে চর বনায়নের গাছ। এ ছাড়াও পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠেছে এ বন। প্রথমে বাঁধ নির্মাণের জন্য চরের মাটি ব্যবহার করতে গাছ কাটা শুরু করেন শ্রমিকেরা। পরে গাছের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকার দাবি জানান স্থানীয়রা। এরপরও ঠিকাদারের লোকজন গাছ কাটা বন্ধ করেননি। তারা গাছ কেটে ফেলে বাঁধের মাটি সংগ্রহ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁধের পাশ থেকে এক্সেভেটর মেশিন দয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। খোলপেটুয়া নদীর চর থেকে মাটি কাটার সময় এসব যন্ত্র দিয়ে উপড়ে ফেলা হচ্ছে চর বনায়নের গাছ। এ ছাড়া নদের চর দিয়ে এক্সেভেটর নিয়ে যাওয়ার জন্য বালু ভরাট করে পথ তৈরি করা হচ্ছে। এতে নদীর চরের অসংখ্য গাছের শাঁসমূল চাপা পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
বন্যতলা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নদীর ঢেউ বা জলোচ্ছ্বাস থেকে বেড়িবাঁধ রক্ষায় ঘূর্ণিঝড় আইলার পর স্থানীয়রা খোলপেটুয়া নদীর চরে গাছগুলো লাগায়। অনেক বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা গাছগুলো দেখাশোনা করছেন। একেকটি গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। সেখানে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয়। হঠাৎ গাছগুলো কাটতে দেখে অমরা অবাক হয়েছে।
একই এলাকার মহাব্বত আলী বলেন, ঝড়ের সময় চরের বড় বড় গাছ অনেকটা ঢাল হিসেবে আমাদেরও রক্ষা করে। গাছগুলো এভাবে কাটা ঠিক হলো না। এ ছাড়া বাঁধ টিকিয়ে রাখতে গাছের প্রয়োজন। খুব কষ্ট করে গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। গাছ কাটা দেখে খুব খারাপ লাগছে।
আব্দুর রহিম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, আগে বাঁধ সংস্কার করতে কোদাল দিয়ে মাটি কাটার কাজ করতে দেখা যেত। এতে গাছের কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু এখন দেখছি, মেশিন দিয়ে বাঁধ সংস্কার করার জন্য গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। যন্ত্রের সাহায্যে বাঁধের ডাল থেকে মাটি কাটছে। এতে বাঁধ স্থায়ী হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ- ১ এর অধীনে শ্যামনগরের ৭/২ নম্বর পোল্ডারে বন্যতলা এলাকায় ২০০ মিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী এটি বাস্তবায়ন করছে মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোং নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান না করে সালাম নামে সাতক্ষীরার একজনের কাছে সাব-কন্টাকে দেয়া হয়েছে। তিনি আবার মাটি দিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজটি প্রায় তিন লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে আব্দুল ওহিদ নামে আরেক লেবার প্রতিনিধির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ আগে তারা (আব্দুল ওহিদ) সেখানে কাজ শুরু করে।
লেবার প্রতিনিধি আব্দুল ওহিদ গাছ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, কাজের স্বার্থে কিছু গাছ কাটতে হয়েছে। তবে স্থানীয়রা সেসব গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়।
গাছ কেটে বাঁধ সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বরত সেকশন অফিসার (এসও) সুমন আলী বলেন, আমার বদলি অর্ডার হয়েছে। এ বিষয়ে আপনি বর্তমান দায়িত্বে থাকা এসও আলমগীর সাহেবের সাথে কথা বলেন।
তবে আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখনো দায়িত্ব বুঝে নেয়নি।
খুলনা গেজেট/এএজে