ভৈরব তীরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের আরেক নাম দৌলতপুর খেয়াঘাট। এই ঘাট যুগের পর যুগ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভৈরব পাড়ি দিচ্ছেন দিঘলিয়া ও দৌলতপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষ। খুলনার তৃতীয় বৃহত্তম ও ব্যস্ততম ঘাটটি সংস্কারে একাধিকবার দাবি জানালেও দুর্ভোগ থেকে রেহাই মেলেনি। উল্টো টোল আদায়কারীদের দুর্ব্যবহার ও কটু কথার শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এ অবস্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথা ভাবছেন স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চারপাশে নদী আর মাঝখানে খুলনা জেলার উপজেলা দিঘলিয়া। সরাসরি সড়ক যোগাযোগহীন এ উপজেলাটি একটি দ্বীপ। একপাশে ভৈরব, আতাই ও আরেক পাশে মজুদখালী নদী ঘেরা উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন । ইউনিয়ন তিনটিতে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছে। এখানকার বাসিন্দাদের উপজেলার বাইরে শহরে কিংবা অন্য কোন এলাকায় যেতে হলে খেয়া পারাপারের কোন বিকল্প নেই। লক্ষাধিক মানুষের পারাপারের জন্য দ্বীঘল দ্বীপে রয়েছে ১১ টি খেয়াঘাট। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেয়াঘাট হচ্ছে দৌলতপুর খেয়াঘাট। ভৌগলিক কারণে এ খেয়া ঘাটটির গুরুত্ব অপরিসীম। শহরের সঙ্গে দ্রুত, সহজ এবং নিবিড় যোগাযোগের লক্ষ্যে দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ পারাপারের জন্য ঘাটটি বেছে নেয়। প্রতিদিন চার সহস্রাতিক মানুষ ঘাটটি দিয়ে পারাপার হয়। খুলনা জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটটি থেকে ইজারার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। তারপরও যাত্রী পারাপারে সুবিধা বরাবরই উপেক্ষিত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, খেয়াঘাটের যাত্রী উঠা নামার জন্য দুই প্রান্তের সিঁড়ি নদীতে ডেবে যাওয়ায় বিশেষ করে দেয়াড়া অংশের সিঁড়ির শেষ প্রান্তে ফাটল ধরায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভাটার সময় দুর্ভোগ দ্বিগুণ আকার ধারণ করে। দৌলতপুর খেয়াঘাটের সরু গলির অর্ধেকাংশ দখল করে আছে ইজারাদারদের টোল আদায়ের চেয়ার টেবিল। বাকি অংশ দিয়ে অসহায় , জরুরী রোগী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, বৃদ্ধা, শিশু, ও নারী পুরুষ ধাক্কাধাক্কি করে বের হওয়ার পর দৌলতপুর বাজারের কাপড়ের পট্টির দীর্ঘ সরু গলি অতিক্রম করে মূলসড়কে উঠতে হয়। কাপড়ের পট্টির সরু গলি দিয়ে যানবাহন বিশেষ করে রিক্সা, ভ্যান, অটো চলাচলের কোন সুযোগ না থাকায় শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ, অসহায়, জরুরী রোগী, বৃদ্ধ, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের সরু গলির ভীতর দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে তারপর সড়কে পৌঁছাতে হয়। এছাড়া প্রবাসী, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত যাত্রীদের সাথে থাকা ভারী ব্যাগ, লাগেজ, বিভিন্ন ধরণের মালামাল নিয়ে কাপড় পট্টির সরু গলি দিয়ে খেয়াঘাটে আসতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঈদ ও পূঁজোর সময়ে কাপড় পট্টির গলিতে ক্রেতাদের ভিড়ে খেয়াপাড়ের যাত্রীদের করুন অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ঘাট সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে যুগ যুগ ধরে দীঘল দ্বীপের হাজার হাজার সাধারণ মানুষসহ খেয়া ঘাটটি দিয়ে পারাপাররত যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দৌলতপুর খেয়া ঘাটের পার্শ্ববর্তী বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ন্ত্রণাধীন একটি লঞ্চঘাট রয়েছে যেটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ওই লঞ্চঘাটে দৌলতপুর খেয়া ঘাটটি স্থানান্তর করা হলে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলতো।
তাদের দাবি, খেয়াঘাটতি লঞ্চঘাটে স্থানান্তরিত হলে ঘাট পার হয়ে প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে মূল সড়কে যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০- ২৫ সেকেন্ড। ফরমাইজখানা ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত মন্ডল জুট টেক্সটাইল মিলস লিঃ ‘র কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পারাপারের জন্য বিআইডব্লিউটিএ এর অনুমোদন নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে দৌলতপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন স্টিমার /লঞ্চঘাটে জেঁটি নির্মাণ করেছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে লঞ্চ ঘাটটি ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া উচিত।
যাত্রীরা বলেছেন, রাত ১১ টার পর পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ এ খেয়া ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয় । এতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়না। তাই এ দাবির সমর্থনে রবিবার(১৬ জুলাই) সকাল ৯ টায় দৌলতপুর খেয়াঘাটের পূর্ব প্রান্ত দিঘলিয়ার দেয়াড়া খেয়া ঘাটে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা করা হবে।