যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৭ কয়েদিকে মুক্তি দিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। মুক্তিপ্রাপ্তরা সকলেই হত্যা মামলার আসামি ও প্রত্যেকেই ২০ বছর কারাবাস করেছেন। রোববার দুপুরে তাদের কাছ থেকে সাজার নির্দিষ্ট জরিমানা আদায় করে মুক্তি দেয়া হয়। একই সাথে ব্লাস্ট যশোরের সহযোগিতায় প্রত্যেককে ২৫ কেজি চাল. ৫ কেজি ডাল, ৩ লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি ও যাতায়াত ভাড়া প্রদান করা হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকাকালীন তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। তারা নম্র ও ভদ্রতার সাথে কারাভোগ করেছেন। একই সাথে তারা কারাগারের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন। এসব কারণে কারাবিধি প্রথম খন্ডের ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী তাদের মুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে ১৭ জনকে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার ১৭ জন মুক্তি পান। তারা প্রায় ২০ বছর যাবৎ কারা অভ্যন্তরে আটক ছিলেন। এসময়ে তারা বাইরের কোন আলো বাতাস দেখতে পাননি। বের হবার পর তারা পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে পেলেন।
মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন, ঝিনাইদাহ জেলার জগন্নাথপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে আব্দুল হান্নান, (জরিমানা পাঁচশ’ টাকা), বাগেরহাট জেলার মোংলা মাছবাজার এলাকার মোতালেবের ছেলে শহিদ হাওলাদার (জরিমানা দুই হাজার), চুয়াডাঙ্গা জেলার সাতগারী গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ ইসলাম (জরিমানা ৫ হাজার), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুসাইনগরের রোকন মন্ডলের ছেলে জামাল উদ্দিন (জরিমানা দুই হাজার টাকা), যশোর সদর উপজেলার মুড়লিমোড় এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে রফিকুল ইসলাম (জরিমানা ১০ হাজার টাকা), খুলনা খালিশপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে শাহ আলম, (জরিমানা তিন হাজার), বাগেরহাট জেলার কচুয়া গ্রামের শ্রীনাথ দাসের ছেলে সুধীর কুমার দাস (জরিমানা ৫ হাজার), খুলনার দৌলতপুর থানার সাহাপাড়া গ্রামের কিরামত আলীর ছেলে জনি হোসেন নুরুন্নবী (জরিমানা একহাজার), বাগেরহাট জেলার মোল্লাপাড়া উপজেলার ভোজগাতী গ্রামের শাহাদত মোল্যার ছেলে দাউদ মোল্যা (জরিমানা ৫ হাজার), চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা চারুলিয়া গ্রামের রজক খাঁর ছেলে জাহিদুল ইসলাম (জরিমানা দুই হাজার টাকা), সাতক্ষীরার দেবহাাটা এলাকার সুরত আলীর ছেলে পল্টু গাজী (জরিমানা ১০ হাজার), বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ এলাকার কাজল সিকদারের ছেলে বাবুল সিকদার, (জরিমানা ৫ হাজার), সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পরানপুর গ্রামের আহাদ আলীর মেয়ে মনোয়ারা বেগম (জরিমানা ৫ হাজার), ঝিনাইদহের দৌগাছিয়া গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আকিনুল ইসলাম (জরিমানা ১০ হাজার), খুলনা টুটপাড়ার রুস্তম আলীর ছেলে আব্দুস সবুর, (জরিমানা ৫ হাজার), বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার বাহিরদিয়া গ্রামের ইনছান উদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম (জরিমানা তিন হাজার) ও কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার মুক্তি মোল্ল্রার ছেলে আব্দুল মালেক (জরিমানা তিন হাজার)।
মুক্তি পেয়ে বন্দি জনি হোসেন জানান, কারাগারে আটক থেকে স্বপ্ন দেখতাম কবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবো। আদৌও পাবো কিনা, সেটা নিয়ে সন্ধিহান জীবন কাটিয়েছি। তবে এভাবে যে মুক্তি মিলবে তা কল্পনা করতে পারেনি। এমনকি আমাদের খাবারও দেয়া হয়েছে। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে কারাকর্তৃপক্ষ ও ব্লাস্ট যশোরকে ধন্যবাদ জানান।
এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, যশোর কারাগার থেকে ২৭ বন্দির মুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে ১৭ জনের মুক্তির নির্দেশ আসে। তিনি আরো বলেন, মুক্তির সাথে সাথে জামিনে বের হয়ে কিছুদিন চলার জন্য প্রত্যেককে খাদ্যদ্রব্য হাতে তুলে দেয়া হয়। তাদের এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন ব্লাস্ট যশোর।
মুক্তি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান, ব্লাস্ট যশোরের সভাপতি ও যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. এম ইদ্রিস আলী, যশোর ইউনিট চিফ অ্যাড.মোস্তফা হুমায়ন কবীর, প্রজেক্ট ম্যানেজার জান্নাতুল ফেরদৌস সুচি প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এবার সারাদেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৩২৭ কয়েদি মুক্তি পাচ্ছেন। খুুলনা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স-এর দপ্তর থেকে জানা যায়, খুলনা বিভাগের ১০টি কারাগারের মধ্যে ৭টি কারাগার থেকে মুক্তির তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৩২ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। এরমধ্যে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৭ জন, খুলনা জেলা কারাগার থেকে একজন, কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে ৪ জন, সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে ২ জন, মাগুরা জেলা কারাগার থেকে ৫ জন এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার থেকে ৩ জন।
খুলনা গেজেট/এমবিএইচ/এমএম