ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে নিহত যুবক মিলনের (২৭) হত্যায় অভিযুক্ত জুয়েলকে আজও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকান্ডের প্রায় দু‘মাস হতে চললেও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিহতের বাবা ও পরিবারের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ভবানিপুর বাজারে প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায় জুয়েল।
নিহত মিলন উপজেলার খলিসাকুন্ডু গ্রামের ইছাহাক আলীর ছেলে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে নিহতের বাবা পাশ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার ইবি থানার বলরামপুর গ্রামের মৃত মোতালেব ফকিরের ছেলে জুয়েলকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত জুয়েলের বাবা গ্রাম্য কবিরাজ ছিলেন। তিনি ৩/৪ বছর পূর্বে নিহত মিলনের চাচার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। কিন্ত মিলনের পরিবার ও প্রতিবেশিরা তার ওই অবাধ আসা-যাওয়া পছন্দ করতেন না। মিলনসহ প্রতিবেশিরা তাকে একাধিকবার তার চাচার বাড়িতে আসতে নিষেধও করেন। কিন্ত জুয়েলের বাবা কবিরাজ মোতালেব ফকির তাদের নিষেধ অমান্য করে ওই বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। পরে প্রতিবেশিরা একদিন ওই কবিরাজকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। সেখানে নিহত মিলনও উপস্থিত ছিলেন।
ওই গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ ওহিদ জানান, গত ২৭ জুলাই মিলন কেনাকাটা করতে ভবানিপুর বাজারে যান। মাগরিবের নামাজ পড়ে সে বাজারেই দাড়িয়ে ছিল। হাটের দিন হওয়ায় সেদিন বাজারে শত শত মানুষের উপস্থিতি ছিল। এ সময় জুয়েল তাকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতেই জুয়েল তাকে হত্যা করে বলেও তিনি জানান।
মামলার বাদি ও নিহত মিলনের বাবা ইছাহাক আলী বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান ছিল মিলন। তার মৃত্যুর পর আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের কাছেই গিয়েছি ছেলে হত্যার বিচারের জন্য। প্রথমে এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জুয়েলের গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল মিটিংও করেছে। এখন আর কেউ আমার ছেলে হত্যার বিচারের জন্য কথা বলে না।’
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, ‘বাবা আমার অনেক বয়স হয়েছে, যদি জীবিত থাকতে আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারতাম তাহলে পরকালেও শান্তি পেতাম।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভবানিপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্তের বাড়ি অন্য জেলায় হওয়ায় আমরা ওই এলাকার মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছি না। তবে আমরা তাকে ধরতে বারবার অভিযান পরিচালনা করছি।’ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা উপায়ে খুনিকে ধরতে পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম