গত দুই বছরে দুর্নীতিবাজদের প্রায় ৫০৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করেছে দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া একই সময়ে দুর্নীতির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় ১ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার বেশি সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট ওই সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে পেশ করা দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। রোববার(২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করা হয়। এ সময় দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক ও দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৯ (১) ধারা অনুযায়ী দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতি সমীপে প্রতি বছর পেশ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক অতিমারি কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাব ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২০ সালের প্রতিবেদন যথাসময়ে প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন একত্রে প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সাফল্যের অংশে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে কমিশনের স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট যাত্রা শুরু করে। ওই ইউনিটের অধীনে ২০২০ সালে আদালতের আদেশে ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে এবং ১৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
আর ২০২১ সালে ৩২৬ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ টাকার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে এবং ১ হাজার ১৬১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (পাউন্ড, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার) অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে দুই বছরে ৫০৬ কোটি ৮৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৪ টাকার সম্পদ ক্রোক এবং ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৫১ লাখ ৯৭৬ টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে অর্থপাচারসহ মানিলন্ডারিং অপরাধের বিষয়ে দুদকের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর বিধান মোতাবেক ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে দুদক কেবল একটি সম্পৃক্ত অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’লব্ধ অর্থের মানিলন্ডারিং তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।
বিভিন্ন গবেষণা বা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার তদন্তের দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। দুদক কেবল ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ/সম্পদ বিদেশে পাচার হলে তা তদন্ত করে থাকে।
অথচ জনসাধারণ অনেক সময় দুদকের এ আইনি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা না করেই সকল অর্থপাচারসহ সেকেন্ড হোম ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় কমিশনকে দিয়ে থাকে।
পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সীমাবদ্ধতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ/সম্পদ তদন্তপূর্বক দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দুদকের আইনি ক্ষমতা সীমিত। বিদেশ থেকে অর্থ/সম্পদ ফিরিয়ে আনার সার্বিক প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ/সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি সহায়তা। এজন্য প্রাথমিকভাবে তথ্য, ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ এবং পরবর্তী সময়ে এমএলএআরের মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করার জন্য দুদক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডেডিকেটেড জনবল গড়ে ওঠেনি।
এমন সীমাবদ্ধতা দূরীকরণে এবং পাচারকৃত অর্থ বা সম্পদ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে দুদককে পর্যাপ্ত আইনি ক্ষমতা দেওয়া, বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই, দুদক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডেডিকেটেড জনবল নিয়োগ দিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি।
খুলনা গেজেট/ এস আই