খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও সচিবালয় এলাকায় সমর্থকদের অবস্থান
  সাজার বিরুদ্ধে ডা. জোবাইদা রহমানের আপিল শুনানি আগামীকাল : হাইকোর্ট

দিল্লিতে কথা বলতে দেওয়া হয়নি, ভিয়েতনামে গিয়ে ভারত নিয়ে যা বললেন বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জেদ বজায় রাখলেও তাঁর সরকারের সমালোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আটকাতে পারলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভিয়েতনামে গিয়ে ভারতের নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার হাল নিয়ে ঠিকই মুখ খুললেন বাইডেন। জানিয়ে দিলেন, দেশকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে এই বিষয়গুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেই হবে।

ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে গিয়ে গতকাল রোববার রাতে সংবাদমাধ্যমের সামনে বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব আরও জোরদার কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আমি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যা আমি সব সময় করে থাকি, এবারও তা–ই করেছি। শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ে তুলতে মানবাধিকারকে সম্মান করা, নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা থাকা যে গুরুত্বপূর্ণ, সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেছি।’

একই সঙ্গে জি–২০ সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্ব ও আতিথেয়তার প্রশংসা করে তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন বাইডেন।

বাইডেনের সফরে সংবাদ সম্মেলন করা নিয়ে কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন চলছিল। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল মোদি-বাইডেন দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর সে দেশের প্রথা অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে। যেকোনো দেশের নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর হোয়াইট হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা যুক্তরাষ্ট্রের রীতি। সেই রীতি মেনেই গত জুন মাসে মোদির সফরের সময় হোয়াইট হাউস কাভার করা সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে দেওয়া হয়েছিল। যদিও সংক্ষিপ্ত, তবু সেই সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ভারতীয় গণতন্ত্র, সংখ্যালঘু সমাজের অবস্থান ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে জবাবদিহি করতে হয়েছিল। গত ৯ বছরে মোদির শাসনামলে সেটাই ছিল প্রথম ঘটনা। দেশে-বিদেশে কোথাও তাঁকে প্রশ্ন করার যে অধিকার কাউকে দেননি, সেই প্রথম তা দিতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, সেটাই ছিল সফরের শর্ত।

সেই শর্তের কথাই এবার যুক্তরাষ্ট্র মনে করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর কোনো রকম প্রশ্নোত্তর পর্বের মুখোমুখি হতে মোদি রাজি হননি। ভারতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রশ্নোত্তর পর্ব বা সংবাদ সম্মেলন—কোনোটাই করা হবে না। এমনকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন আলাদাভাবেও কোনো সংবাদ সম্মেলন করতে পারবেন না। সিএনএন তা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রচার করেছিল। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারতে না হলেও বাইডেন ভিয়েতনাম গিয়ে সফররত সাংবাদিকদের সেই অধিকার দেবেন। সংবাদ সম্মেলন করবেন হ্যানয়ে। গতকাল রাতে সেখানেই তিনি নিজে থেকে জানিয়ে দেন, ভারতের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজ নিয়ে তাঁদের ধারণার বিষয়টি আরও একবার তিনি মোদিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।
জি-২০ সম্মেলন শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা এ নিয়ে সরব হয়েছেন।

হ্যানয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনের মন্তব্যের ক্লিপিং দিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ গতকাল গভীর রাতে ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘বাইডেনকে মোদি বলেছিলেন, প্রেস কনফারেন্স করব না, করতেও দেব না। কিন্তু তা কাজে এল না। ভারতে মোদির মুখের ওপর বাইডেন কী বলেছেন, ভিয়েতনামে গিয়ে সেটাই তিনি জানিয়ে দিলেন। কী সেই কথা? নাগরিক সমাজ ও মুক্ত গণমাধ্যমের ভূমিকা ও মানবাধিকারকে সম্মান দেখানো জরুরি।’

দিল্লিতে বাইডেন-মোদি বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদের ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক কো-অর্ডিনেটর কার্ট ক্যাম্পবেল সফররত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। তা নিয়ে নেতারা আলোচনা করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র কখনো অন্য দেশকে এই বিষয়ে উপদেশ দেয় না। সম্পর্কে ভদ্রতা–নম্রতা বজায় রাখা জরুরি। তবে সেই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছিলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে কঠিন প্রশ্ন থাকলে তা জিজ্ঞাসা করা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৯ বছরের শাসনকালে একবারের জন্যও কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি। সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদেরও প্রশ্ন করার অধিকার দেননি। কারও কোনো প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের হিংসা ও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর নীরবতা ভাঙাতে শেষ পর্যন্ত বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে বাধ্য হয়েছিল, যাতে তিনি সংসদে জবাবদিহিতে বাধ্য হন। সংসদীয় ভারতের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণ নজিরবিহীন।

খুলনা গেজেট/ এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!