তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোরাঞ্চল। এ যেন আগুনের উত্ত্যপ্ত পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে মানুষকে। যশোরে গত ১০ বছর পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ৩ টায় তাপমাত্রার এ পারদ ওঠে। এদিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র এ তাপপ্রবাহে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা প্রাণীকূলকে এ অঞ্চলে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে।
যশোর আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, যশোরাঞ্চলের ওপর দিয়ে গত ২৭ দিন যাবৎ বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার আগুনে পুড়ছে এ অঞ্চলের মানুষ। গত ২ এপ্রিল থেকে এ পরিস্থিতির শুরু হয়। সোমবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমান সময়ে ধারাবাহিকভাবে কখনো যশোর আবার কখনো চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আবহাওয়া অফিস বলছে এর আগে ২০১৪ সালে যশোরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। সেই রেকর্ড দশ বছর পর ভেঙে এবার উঠেছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর তীব্র এ তাপপ্রবাহ এবারই প্রথম দেখলো যশোরবাসী। এতে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছেন। ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি মিলছে না মানুষের। প্রখর রোদ ও গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তারা তীব্র রোদ ও গরমে কাজ করতে পারছেন না। জীবনের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেরিয়ে কাজ না পেয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন গাছের নীচে। সেখানে অলস সময় কাটিয়ে দুপুরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে পুকুরের পানিতে দীর্ঘক্ষণ গোসল করছেন। পিপাসা নিবারনে মানুষ ভিড় করছেন শরবত ও আখের রসের দোকানগুলোতে। দুপুরের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে শহরের রাস্তাঘাট। মানুষ জরুরি কাজ ছাড়া দুপুরে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।
এদিকে প্রচন্ড গরমে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গড়ে ২৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরো শতাধিক রোগী। এদেরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যাই বেশি। তারা জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আবার তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তবে গরমজনিত রোগ এখনও যশোরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি বলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে যশোর সিভিল সার্জন অফিসের ডাক্তার অনুপম কুমার দাস বলেন, তীব্র এ তাপদাহে মানুষকে সতর্কতার সাথে বাইরে চলাচল করতে হবে। রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। অধিক পরিমানে পানি পান করতে হবে ও ঢিলেঢালা সুতি কাপড়ের পোশাক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষকে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। এ সব সতর্কতা মেনে চললেই আবহাওয়ার ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে মানুষ সুস্থ থাকতে পারবে।
তিনি বলেন, গরমে হাসপাতালে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সেটা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও তারা খারাপ কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি।
খুলনা গেজেট/এএজে