দক্ষিণ আফ্রিকায় সাদা পোশাকের লড়াইয়ে বাংলাদেশের নেই কোনো রঙিন গল্প। যা আছে শুধু হতাশার। তবে এবারের সফরটা ভিন্ন, অন্য সববারের তুলনায়। ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টেস্টের সুধা পানে ফুরফুরে মেজাজে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) কারণে টেস্ট দলের বেশ কয়েকজনকে ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে যেন মনে হচ্ছে আনকোরা। সবকিছু মিলিয়ে বল যেন বাংলাদেশের কোর্টে!
তাইতো মুমিনুল হক অকপটে বলে দিলেন, ‘আমি তো সবসময় বলি যে জেতার জন্যই খেলি। এই সিরিজেও আমরা জেতার জন্যই খেলবো। তার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রক্রিয়া মতো আগানো। ৫ দিন ভালোভাবে দাপট ধরে রাখলে ফল অবশ্যই আমাদের পক্ষে আসবে।’
কোনো রাখঢাক না রেখেই ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বুধবার (৩০ মার্চ) মুমিনুল যেন বলে দিয়েছেন মনের কথাই। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় ডারবানের কিংসমিডে স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামবে টাইগাররা।
এই কিংসমিডের ছোট একটি পরিসংখ্যান উজ্জীবিত করতে পারে সফরকারী দলকে। ২০০৯ সাল থেকে এই মাঠে ৯টি টেস্ট খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় মাত্র ১টিতে! ২০১৯ সালে এই মাঠে জিতেই প্রথম কোনো এশিয়ান দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জেতার রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কা। এক কথায় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ডারবান যেন অপয়া!
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয়ের কোনো রেকর্ড নেই। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশ ৬টি ম্যাচ খেলেছে— তার প্রত্যেকটিতেই হেরেছে বড় ব্যবধানে। ৫টি ছিল ইনিংস ব্যবধানে হার। আর একটিতে ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। এ ছাড়া দেশের মাটিতে ৬ টেস্ট খেলে সাফল্য বলতে দুটি ম্যাচে ড্র। তবে এবার হতে পারে ভিন্ন কিছু!
লুঙ্গি এনগিডি, কাগিসো রাবাদা, এইডেন মার্করাম, রাসি ফন ডার ডুসেনদের ছাড়া প্রোটিয়া শিবির যেমন খাপছাড়া, তেমনি বাংলাদেশ প্রায় পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে উজ্জীবিত। স্কোয়াডের চার সদস্যের এখনো অভিষেকই হয়নি। বাংলাদেশ দলে একমাত্র সাকিব আল হাসান নেই পারিবারিক কারণে। তামিম ইকবাল দলে ফিরেছেন ৫ টেস্ট পর। দক্ষিণ আফ্রিকার অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণের তুলনায় বাংলাদেশ পেস আক্রমণ বেশ অভিজ্ঞ। পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা তাসকিন আহমেদ কিংবা নিউ জিল্যান্ডে ইতিহাস গড়া ইবাদত হোসেন। সঙ্গে তরুণ তুর্কি শরিফুল ইসলাম তো আছেনই।
তাইতো মুমিনুল বলছেন অভিজ্ঞতায় সুবিধা পাওয়ার কথা, ‘অভিজ্ঞতায় একটু হয়তো এগিয়ে থাকবো। কিন্তু সুবিধা ওরাও পাবে। যেমন ওরা ঘরের মাঠে খেলছে। তো দুই দলেরই কিছু কিছু সুবিধা থাকবে। কিন্তু বড় জিনিস হলো ৫ দিন ১৫টা সেশন ভালা খেলা। ভালো জায়গায় বল করা, ভালো ব্যাটিং করা। চাপের জিনিসগুলো ভালোভাবে মানিয়ে নেয়া, জেতা গুরুত্বপূর্ণ।’
মুমিনুলের মতে, টিম কম্বিনেশন এখনো ঠিক হয়নি। তবে তিন পেসার আর এক স্পিনার নিয়েই নামার সম্ভাবনা বেশি। টেস্ট দলে ফেরা তামিম ইকবালের ওপেনিং পার্টনার হতে পারেন মাহমুদুল হাসান জয়। এমন ঘোষণা অবশ্য দিয়েছেন টেস্ট অধিনায়ক। মুমিনুল বলেন, ‘কম্বিনেশন, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কাল উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেবো। কারণ, কন্ডিশনের বিষয়ে অনেক ভিন্নতা থাকে।’
কিংসমিড পরিচিত গতি আর বাউন্সের কারণে। পেসবান্ধব উইকেট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সম্প্রতি স্পিনও কাজ করছে বেশ! থিতু হতে পারলে রানও পাবেন ব্যাটসম্যানরা। চলতি বছর কিংসমিডে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের প্রথম দুই ইনিংসে গড় রান ৪০০।
ডারবানে বৃষ্টি দিতে পারে বাগড়া। আবহাওয়া বার্তায় প্রথম চারদিনেই আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা।
রঙিন জার্সিতে নিজেদের ইতিহাস রাঙিয়েছে বাংলাদেশ। এবার সাদা পোশাকে রাঙানোর সুযোগ। মুমিনুলদের স্বপ্ন হবে তো সত্যি?
বাংলাদেশ সম্ভাব্য একাদশ:
তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী রাব্বী, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলাম।