সপ্তাহ ব্যবধানে ফের অস্থির হয়ে ওঠেছে তেরখাদা উপজেলার হাটবাজার গুলোতে নিত্যপণ্যের দাম। বেড়েছে মাছ, মাংস ও শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম। এতে বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের মতে, শুধু সরকার পরিবর্তন হলেই চলবে না, অতিমুনাফা করার মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে ব্যবসায়ীদের। উপজেলার বেশ কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র।
ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। ক্রেতাদের অভিমত, সরকার বদলালেও বাজারের চিত্র বদলায়নি; অসাধুরা এখনও লুটে নিচ্ছে টাকা।
উপজেলার কাটেংগা এলাকার মাসুদ শেখ নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কয়েকদিন দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারও সেই একই চিত্র। সরকার বদলালেও বদলায়নি বাজারের চিত্র। এখনও বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা সদরের কাটেংগা বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন ৮০-১০০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৬০ টাকা ও পটোল ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, আর প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। বাজারে লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১০-১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত ৪-৫ দিন আগে বৃষ্টির কারণে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে নেমে এসেছে ১৬০-১৮০ টাকা।
মরিচ ব্যবসায়ী আজিজুল ফকির বলেন, বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন আগে অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল কাঁচা মরিচের দাম। এখন আবার কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম আরও কমে আসবে।
এদিকে, সরকার ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয়ার পর আরও চড়েছে বাজার।
বিক্রেতারা বলছেন, দাম নির্ধারণের আগে বাজারে কম দামেই বিক্রি হয়েছে ডিম ও মুরগি। কিন্তু দাম বেঁধে দেয়ার পর খামারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। বাজারে মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, আর সাদা ডিম ১৫৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চড়া চালের দাম। বর্তমানে মিনিকেট ৭১-৭২ টাকা, আটাশ চাল ৬৫-৭০ টাকা, বাসমতি ৯৫ টাকা, সুগন্ধী চিনিগুঁড়া পোলাওর চাল ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। আর প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা। মাছের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। বাজারে ইলিশের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই।
ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
খুলনা গেজেট/এএজে