খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে আজ দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালন
  কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা, নিহত ৩

তেরখাদায় খেজুর গাছ যাচ্ছে ইটভাটায়, রসের স্বাদ ভুলছে মানুষ

রাসেল আহমেদ, তেরখাদা

শীতে খেজুরের রসের সঙ্গে গ্রাম বাংলার সম্পর্ক বেশ পুরানো ও নিবিড়। তবে এই খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে তেরখাদা উপজেলার মানুষ। বর্তমানে ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে খেজুর গাছের ব্যবহার ও গাছির সংকটের কারনে আজ আর খেজুরের গাছ থেকে তেমন ভাবে রস সংগ্রহ করা হয়না। দিন দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়ায় এবং সেখানে জ্বালানী হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এক সময়ের রস সংগ্রহের ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে।

স্থানীয় জনসাধারণ ও গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ থেকে ৯/১০ বছর পূর্বেও তেরখাদা উপজেলার সর্বত্রই খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করা হতো। সকালে মাঠে-ঘাটে, ভিটায়, ঠিলে (কলসী বা হাঁড়ি) ভর্তি খেজুরের রসের ছড়াছড়ি চোখে পড়ত। চারদিকে খেজুর রসের নাস্তা ও রসের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। মানুষ এখন রসের নাস্তা আর রসের ভেজা পিঠার স্বাদ ভুলে যেতে বসেছে। এখন আর আগের মত চারদিকে রসের সারি সারি ঠিলে (কলসী) চোখে পড়ে না।

সরেজমিন তেরখাদার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা ও ক্ষেতের পাশে খেজুর গাছগুলো সারি সারি দাড়িয়ে আছে, তাতে হাতে গোনা দু এক জন গাছ কাটলেও আগের মত রস পাচ্ছে না তারা। তেরখাদায় এখন খেজুরের গুড়ের ছড়াছড়ি নেই। বাড়ি বাড়ি নেই রস জ্বালানোর ধুম। মাত্র ৯/১০ বছরের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্য।

উপজেলা সদরের কাটেংগা, জয়সেনা ও তেরখাদা হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, চিনি ও রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত গুড় উঠলেও তা ১২০/১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইখড়ি এলাকার গাছি মিরাজ, সদরের ফজলু মোল্যা, কাটেংগার ইলিয়াছসহ কয়েকজন গাছির সাথে কথা বলে জানা যায়, জ্বালানি ও গাছির সংকটের কারনে তাঁরা এখন আর খেজুর গাছ কাটেন (রস সংগ্রহ করার জন্য) না। অনেকে গাছি দিয়ে গাছ কাটতে ইচ্ছুক নয়। এখন কেউ কেউ ৮/১০ টি গাছ কেটেও এক ঠিলে রস পায়। তা বিক্রি করেন ২০০/২৫০ টাকায়। তাও আবার অনেকে পাচ্ছে না।

তাঁরা জানান, আগের তুলনায় গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অনেকে পুরানো গাছ কেটে ঘরের খুটি তৈরি করছেন আবার ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবেও অনেক গাছ ব্যবহার হচ্ছে। এতে করে খেজুর গাছের সংখ্যাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এসব কারণে খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে তেরখাদাবাসী।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শিউলি মজুমদার খুলনা গেজেটকে বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর গাছের রস। শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি এক ধরনের শিল্প। এর জন্য দরকার হয় বিশেষ দক্ষতা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য। খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন রকমের গুড় তৈরি করে থাকেন গাছিরা। দিন দিন এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্প পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসা।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!