দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে ভোট হচ্ছে খুলনার তেরখাদা, দিঘলিয়া ও ফুলতলা উপজেলায়। এই তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে সম্পদ বেশি তেরখাদার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর। তার সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৪ কোটি টাকা। আয় বেশি একই উপজেলার প্রার্থী ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি আবুল হাসান শেখের। বছরে তার আয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
ঋণ বেশি ফুলতলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেনের। ৭০ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে তার। কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরে এই ঘোষণা আসায় প্রার্থী তালিকা ও ব্য়ালট পেপারে তার নাম থাকবে। তিনি পেয়েছেন দোয়াত-কলম প্রতিক।
আর মামলা বেশি দিঘলিয়ার প্রার্থী বিএনপি নেতা গাজী মো. এনামুল হাসান মাসুমের। তার মামলার সংখ্যা ১০টি। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তেরখাদা উপজেলা
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তেরখাদার সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর বছরে আয় কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, তার উপর নির্ভরশীলদের আয় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে হাতে নগদ ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, ১২ লাখ টাকা মূল্যের একটি মাইক্রোবাস, ১২ ভরি স্বর্ণ, একটি পিস্তল ও একটি বন্দুক যার মূল্য দেড় লাখ টাকা। স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্ণ।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ দশমিক ৫৫ একর জমি, লবণচরা এলাকায় ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা মূল্যের শূন্য দশমিক ৫ একর জমি, কেডিএ আবাসিক এলাকায় ৫৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের প্লট, নগরীর পশ্চিম টুটপাড়া এলাকায় ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ি। স্ত্রীর নামে খুলনায় রয়েছে ১ দশমিক ৭৮ একর জমি ও রাজধানীর ধানমন্ডিতে ৪৩ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট। আইএফআইসি ব্যাংকে বাচ্চুর ঋণ আছে ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
তেরখাদার চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের আবুল হাসান শেখের বছরে আয় ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাত থেকে আয় ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে আয় ৩৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা, ব্যাংকে ৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, ২৫ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি, ২ লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ৩ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৫ একর জমি, ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ২টি বাড়ি। তার নামে কোনো ঋণ এবং কোনো মামলা নেই।
ফুলতলা উপজেলা
হলফনামায় দেখা গেছে, ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনের বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে বছরে ৯২ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।
তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে হাতে নগদ ২ লাখ টাকা, ব্যাংক জমা ২২ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার ৮.০২ একর কৃষি জমি, ৬.০৫ কের অকৃষি জমি, একটি দুই তলা বাড়ি রয়েছে। কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখায় তার ঋণ রয়েছে ৭০ লাখ টাকার।
ফুলতলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেনের ব্যবসা থেকে বছরে আয় ১৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা। তার উপর নির্ভরশীলদের আয় ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নিজের কাছে নগদ ৫ লাখ ও স্ত্রীর কাছে নগদ ২ লাখ টাকা, ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি, প্রায় ৬ লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সম্পদ, স্ত্রীর ৮ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে শূন্য দশমিক ৬০ একর জমির উপর দুই তলা বাড়ি, যার মূল্য অর্ধ কোটি টাকা; ২ বিঘা কৃষি জমি ও ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৪৮ শতক অকৃষি জমি। ৭০ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে তার।
দিঘলিয়া উপজেলা
দিঘলিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মল্লিকের বছরে আয় মাত্র ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রতি মাসে তার আয় ১৪ হাজার টাকারও কম। তার অস্থাবর সম্পদ বলতে নগদ দুই লাখ এবং ব্যাংকে মাত্র ১০ হাজার টাকা রয়েছে। স্থাবর বলতে রয়েছে দশমিক ১৪ একর অকৃষি, যার মূল্য ১৪ লাখ টাকা। তকে তার ছেলের ৪২ লাখ টাকা দামের দশমিক ৪২ একর অকৃষি জমি এবং ৪০ লাখ টাকা দামের একতলা একটি ভবন আছে।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মারুফুল ইসলামের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে ২০ হাজার, মাছ চাষ থেকে ৬০ হাজার এবং চেয়ারম্যান হিসেবে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভাতা পান তিনি। তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৭ টাকার। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দশমিক ৫০ একর কৃষি জমি, ২ একর অকৃষি জমি এবং দেড় একরের একটি খামার রয়েছে। এসবের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা হিসেবে দাবি করেছেন মারুফ।
দিঘলিয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. এনামুল হাচান মাসুমের বিরুদ্ধে বর্তমানে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন আইনে মামলা রয়েছে ৮টি। এছাড়া আগে তার নামে মামলা ছিল আরও ২টি।
ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ২ লাখ ও ব্যাংকে ২ লাখ টাকা, ৩৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৮০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। স্থাবর কোনো সম্পদ নেই। নেই কোনো ব্যাংক ঋণ।
অপর প্রার্থী জাকির হোসেন হলফনামায় আয় ও সম্পদের কোনো তথ্য দেননি।
খুলনা গেজেট/হিমালয়