ক্যান্ডি টেস্টে বাংলাদেশকে শক্ত হাতে পাল্টা জবাব দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের ৫৪১ রানের জবাবে লঙ্কানরা দুইশ পার করার আগেই তিন উইকেট হারায়। তবে অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে দাঁত কামড়ে ক্রিজে পড়ে থেকে ব্যবধান কমাচ্ছেন। যদিও এখনও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে স্বাগতিকদের। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ ৩১২ রানে এগিয়ে।
ক্যান্ডির ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে সুবিধা করতে পারেননি শ্রীলঙ্কান বোলাররা। ফলে স্কোর বোর্ডে ৫৪১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ দল। এরপর দায়িত্ব লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। সেই কাজটি ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সফরকারীদের অস্বস্তি হয়ে আছেন তিনি।
প্রথম ইনিংসে প্রায় ৬ সেশনের উপরে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ দল। যদিও ২৫ ওভার খেলা হয়নি বৃষ্টি আর আলোক স্বল্পতার কারণে। তৃতীয় দিনের শুরুতে স্কোর বোর্ডে ৭ উইকেট হারিয়ে ৫৪১ রানের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। পরে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের খেলা শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ২২৯ রান। করুনারত্নে ৮৫ ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ২৬ রানে অপরাজিত আছেন
ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নের ৫৮ রানের সঙ্গে ওশাডা ফানার্দোর ২০ ও অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসের ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে লঙ্কানরা। চতুর্থ দিন বাংলাদেশের থেকে ৩১২ রানে পিছিয়ে থেকে আবার ব্যাটিংয়ে নামবে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণার পর মধ্যাহ্নভোজের আগে ৮ ওভার ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা। যেখানে চার ওভারের ছোট্ট স্পেলে দুর্দান্ত বোলিং করেন দীর্ঘদিন পর টেস্টে ফেরা তাসকিন আহমেদ। গতি, বাউন্স আর আগ্রাসনের সঙ্গে নিখুঁত লাইন-লেংথ মিলিয়ে নাড়িয়ে দেন দুই লঙ্কান ওপেনারকে। সেই চ্যালেঞ্জ জয় করে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিক শিবির। ম্যাচের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেন দুই ব্যাটসম্যান করুনারত্নে ও থিরিমান্নে।
দ্বিতীয় সেশনে ইনিংসের ৩৩তম ওভারে সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। তাইজুলের করা ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকে, অনেক চেষ্টা করেও ব্যাটে-বলে সংযোগ করতে পারেননি থিরিমান্নে, বল আঘাত করে প্যাডে। জোরালো আবেদন করলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ জানাননি অধিনায়ক মুমিনুল হক। সিদ্ধান্তহীনতায় না ভুগলে তখনি ব্রেক-থ্রু পেয়ে যেত সফরকারীরা।
তার আগেই অবশ্য ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দেখা পান থিরিমান্নে। পরে তিনি ফিরেছেন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। দ্বিতীয় সেশনের বিরতিতে যাওয়ার আগের বলে লেগবিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হন তিনি। লঙ্কান ওপেনার রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলে সাজঘরে ফেরেন ৫৮ রান করে। ১২৫ বলের ইনিংসে ছিল ৮ চার। থিরিমান্নের আউটের মধ্য দিয়ে ভাঙ্গে ১১৪ রানের জুটি।
থিরিমান্নে থাকা অবস্থায় পার্শ্ব নায়কের ভূমিকায় ছিলেন করুনারত্নে। এবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। পার্টনারশিপ গড়েন ওশাডা ফার্নান্দোর সঙ্গে। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনের শুরুতে নিজের ফিফটি তুলে নেন করুনারত্নে। ১২২ বলে করা অর্ধশতকটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম।
দ্বিতীয় উইকেটে করুনারত্নে-ফার্নান্দোর ৪৩ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের ৫৪তম ওভারে তাসকিনের পেস সামলাতে গিয়ে ব্যাটের কিনারায় লেগে লেগ সাইড দিয়ে পেছনে যায়, বাঁ-দিকে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। ২০ রানে ফেরেন ফার্নান্দো।
সুবিধা করতে পারেননি ম্যাথুসও। ফেরার টেস্টে প্রথম ইনিংসে মোটে ২৫ রান করে তাইজুলের বলে বোল্ড হন তিনি। ফলে ১৯০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ঠিকই নিজের দায়িত্ব পালন করেন করুনারত্নে। টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। পরে ধনঞ্জয়ার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ৩৯ রানে পার্টনারশিপে দিনের খেলা শেষ করেন করুনারত্নে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংস: ৫৪১/৭ ডিক্লেয়ার, ১৭৩ ওভার (শান্ত ১৬৩, মুমিনুল ১২৭, তামিম ৯০, মুশফিক ৬৮* লিটন ৫০; ফার্নান্দো ৪/৯৬)
শ্রীলঙ্কা: তৃতীয় দিন শেষ: ২২৯/৩, ৭৩ ওভার (করুনারত্নে ৮৫*, থিরিমান্নে ৫৮; তাসকিন ১/৩৫)
খুলনা গেজেট/ এস আই