খুলনা, বাংলাদেশ | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  নতুন বিশ্ব গড়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে : চবি’র সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা
  চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির হৃদপিন্ড, চট্টগ্রাম বন্দরকে সত্যিকার বন্দরে পরিণত করার কাজ চলছে : প্রধান উপদেষ্টা
  ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনার রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার ৩

তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়

লাইফ স্টাইল ডেস্ক

চলছে তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড গরমে হাপিত্যেশ চারদিকে। এ সময়ে সুস্থ ও সতেজ থাকতে কিছু পরামর্শ মেনে চলা অতি জরুরি, অন্যথায় ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ। এই গরমে কীভাবে সুস্থ ও কর্মচঞ্চল থাকা যায়, তার উপায় জানিয়েছেন পটুয়াখালী গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নূর উদ্দিন।

তীব্র গরমে যেসব শারীরিক সমস্যা হতে পারে

ডা. নূর উদ্দিন বলেন, অসহনীয় গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে হিট স্ট্রোকের। পরিবারের বয়স্ক, অসুস্থ সদস্য ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। হিট স্ট্রোকের মূল কারণ পানিশূন্যতা। বয়স্ক, অসুস্থ ও শিশুরা অনেক সময়ই এটা অনুধাবন করতে পারে না। তাই তাদের দিকে বাড়তি নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এ ছাড়াও প্রচণ্ড গরমে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগ, নিউমোনিয়া, পানিবাহিত টাইফয়েড ও জন্ডিস এবং চর্ম রোগ বা ফুসকুড়ির প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও চিকিৎসা

অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়। এর ফলে ঘাম বন্ধ হয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করে।

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা এবং চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন ব্যক্তি। অস্বাভাবিক দুর্বলতা, মাংসে টান ও বমি অনুভব হয়। শেষ পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং খিঁচুনি হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে গিয়ে শরীর থেকে যতটুকু সম্ভব কাপড় খুলে ফেলতে হবে। ফ্যান বা এসির ব্যবস্থা থাকলে দ্রুত তা চালু করতে হবে। না হলে হাত পাখা দিয়ে রোগীর শরীরে বাতাস করতে হবে। ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছতে হবে। অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে।

তীব্র গরমে সুস্থ থাকার উপায়

ডা. নূর উদ্দিন বলেন, তীব্র গরমে বিশেষত শিশু ও কিশোর, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ এবং খেটে খাওয়া শ্রমিক ও মজুরদের কষ্ট ও ঝুঁকি বেশি। কর্মজীবী, শিক্ষার্থীসহ যাদের বাইরে যেতে হয় এবং যারা ঘরে থাকেন তাদের কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে—

পর্যাপ্ত পানি পান করুন : প্রতিদিন অন্তত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করুন। ডিহাইড্রেশন রোধে ঘন ঘন পানি খান, এমনকি তৃষ্ণা না পেলেও।

হালকা ও সুতি পোশাক পরুন : সাদা বা হালকা রঙের, ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক গরমে আরাম দেয় এবং ঘাম শোষণ করে।

রোদে বের হলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন : সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে ছাতা, হ্যাট বা সানগ্লাস ব্যবহার করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় পানি, শরবত বা স্যালাইনের বোতল বহন করতে হবে।

সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন : দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে রোদ সবচেয়ে তীব্র থাকে। এই সময়ে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো।

প্রতিদিন গোসল : শরীরের তাপমাত্রা কমাতে প্রতিদিন গোসলের অভ্যাস করতে হবে।

ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করুন : প্রতিদিন একাধিকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল শরীরের তাপমাত্রা কমায় ও সতেজ রাখে।

ইলেক্ট্রোলাইট বা লবণ ও চিনি মিশ্রিত পানি পান করুন : গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে লবণ ও মিনারেল বের হয়ে যায়, তাই ওরস্যালাইন বা লবণ-চিনি মিশ্রিত পানি পান করুন।

শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের বিশেষ যত্ন নিন : এদের হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতার ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই সতর্কতা জরুরি।

খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাওয়া : খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। বিশেষত যারা হৃদরোগ, লিভার ও কিডনির স্থায়ী রোগে ভুগছেন তাদের। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এ সময় বাইরের কাজ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। একটানা কেউ রোদে কাজ করবেন না। কাজের মধ্যে কিছু সময় পরপর ছায়ার মধ্যে বিশ্রাম নিতে হবে।

মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দেওয়া : বারবার মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দিতে হবে, বারবার পানি পান করতে হবে। হালকা লবণ মিশ্রিত পানি কিংবা স্যালাইন এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী।

তীব্র গরমে কী ধরনের খাবার খাবেন

হালকা খাবার গ্রহণ করুন : ডা. নূর উদ্দিন বলেন, রাস্তা ও ফুটপাতের অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশে তৈরি শরবত, চা বা অন্যান্য খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে। চর্বিযুক্ত ভারী খাবার ও মসলা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রচুর পানি ও লবণ আছে এমন খাবার বিশেষত তরমুজ, ডাব, পাকা কলা, শসা, স্ট্রবেরি এসব ফল খেতে হবে। যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে। ফলমূল, শাক-সবজি, দই, লেবুর শরবত ইত্যাদি শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

ঝিঙে, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, শজনে ডাঁটা পাতলা ঝোল রান্না করে খেলে শরীরে গরম কম অনুভূত হবে ও পেট ভালো থাকবে। কাঁচা আমের শরবত খেতে পারেন। এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। পাকস্থলী সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টক দইয়ের শরবত বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া শিশু ও রোগীরা পাতলা করে সবজি স্যুপ খেলে তা শরীরের জন্য উপকারী।

তীব্র গরমে কী ধরনের খাবার খাবেন না :

ডা. নূর উদ্দিন বলেন, কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গরম অনুভূত হতে পারে। যেমন—মশলাজাতীয় খাবার, ফুচকা, চটপটি, ফাস্টফুড, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, স্টেক এসব খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে বদহজম করতে পারে।

চা বা কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে, তাই এসব থেকে বিরত থাকতে হবে।

গরমের সময় দুগ্ধ জাতীয় খাবার দ্রুত নষ্ট হয় এবং ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি হয়।

আইসক্রিম ও কোমল পানীয় খেলে শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয় সত্যি, কিন্তু এসব খাবারে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এসব পরিহার করাই ভালো।

অতিরিক্ত চিনি ও লবণ এ দুটি জিনিস এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব খাওয়া সীমিত রাখতে হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!