অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক ব্যবস্থাপক এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার আসামিরা হলেন- তিতাসের স্টেশন কন্ট্রোল শাখার এসওডি (এমডি) অপারেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. মহিদুর রহমান এবং তার স্ত্রী সাফিয়া শাহানা।
গতকাল দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকার সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন বলে সংস্থার উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানান।
দুর্নীতি দমন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দ-বিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ২ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬১ টাকার সম্পদ অর্জন এবং কমিশনের জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ৪৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, মহিদুর রহমান তার ‘অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দিতে’ স্ত্রী সাফিয়া শাহানার নামে সম্পত্তি কিনেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে সাফিয়া শাহানার নামে ঢাকার গুলশানে দেড় কাঠা জমিতে একটি ৬তলা বাড়ি, খিলগাঁও এলাকায় আধা কাঠা জমি, ঢাকার দক্ষিণখানে দুই কাঠা জমি, বারিধারায় একটি ফ্ল্যাট ও টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ৩৭ শতাংশ জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া গাজীপুরের কুনিয়া এলাকায় জ্যারোমা সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মালিকানা, একই এলাকায় যমুনা সিএনজি স্টেশনের (ইউনিট-২) ৪৫ শতাংশ মালিকানা তার নামে রয়েছে বলে অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে দুদক।
এজাহারে বলা হয়েছে, এসব সম্পত্তি কিনতে সাফিয়া শাহানা তার স্বামীর ‘অবৈধভাবে উপার্জিত’ আয় থেকে ২ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬১ টাকা ব্যবহার করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, মহিদুর তিতাসের অপারেশন ডিভিশনের স্টেশন কন্ট্রোল শাখার ব্যবস্থাপক। তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে মহিদুরের স্ত্রী সাফিয়া শাহানার নামে ঢাকার গুলশান থানার উলন মৌজায় দেড় কাঠা জমিতে ৬ তলা একটি বাড়ি, খিলগাঁও মৌজায় আধা কাঠা জমি, দক্ষিণখানে ২ কাঠা জমি, টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ৩৭ শতাংশ জমি ও বারিধারায় একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে গাজীপুরের বড়বাড়ি জ্যারোমা সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের ৩৩.৩৩ শতাংশ মালিকানা, একই এলাকায় যমুনা সিএনজি স্টেশন (ইউনিট-২)-এর ৪৫ শতাংশ মালিকানা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফার্নিচারসহ মোট ৪ কোটি ৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৩২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। অপরদিকে তার ব্যাংকঋণ বা দায় পাওয়া গেছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৪৭১ টাকা। ঋণ বা দায় বাদে তার নামে অর্জিত নিট সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৮৫ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬১ টাকা। অথচ দুদকের নোটিশের জবাবে এসব স্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে তিনি মাত্র ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকার অস্থাবর-স্থাবর সম্পত্তির হিসাব বিবরণী দাখিল করেছিলেন।
দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান ও সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে সাফিয়া শাহানার আয়-ব্যয়ের তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৯০ হাজার ৫০০ টাকার। এর বিপরীতে তিনি পারিবারিক ব্যয় করেছেন ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা। পারিবারিক ব্যয় বাদে দুই কোটি দুই লাখ ৯০ হাজার ৯৬১ টাকার সম্পদ অর্জনের পক্ষে আয়ের গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস পাওয়া যায়নি।
খুলনা গেজেট/ এস আই