শরীফুল চাপ আলগা করে দিচ্ছিলেন কি না, সে আলোচনা উঠছিল। তবে দ্বিতীয় আঘাতটি করলেন এ বাঁহাতি পেসার। রাউন্ড দ্য উইকেট করা বলটি বেরিয়ে যাচ্ছিল পাতুম নিসাঙ্কার কাছ থেকে, তাতে ব্যাট চালিয়েছিলেন তিনি। সামনে ঝুঁকে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় উইকেট, বাংলাদেশ লড়াইয়ে ফিরেছে!
তাসকিনের ফুলার লেংথের বল, সেটি আবার ঢুকছিল ভেতরের দিকে। তাতে লাইন মিস করে গেছেন দিমুথ করুনারত্নে। হয়েছেন বোল্ড। তৃতীয় ওভারে প্রথম আঘাত তাসকিনের, যে ব্রেকথ্রু খুব করে চাওয়া ছিল বাংলাদেশের। তবে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলতে উইকেট প্রয়োজন আরও। নিসাঙ্কার সঙ্গে ক্রিজে যোগ দিয়েছেন কুশল মেন্ডিস।
ইনজুরির কারণে মূল দলের ৪ জন ক্রিকেটারকে ছাড়াই এশিয়া কাপে খেলতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। অনেকেই স্বল্প শক্তির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ভালো পারফরম্যান্সের আশায় ছিলেন। তবে সেই আশা গুড়েবালি করে দিয়েছেন লঙ্কান পেসার মাথিশা পাথিরানা। তিনি একাই বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছেন।
পাথিরানা একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। স্পিনার মাহিশ থিকশানা ২ উইকেট নিয়ে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। আর তাতেই বাংলাদেশ অল আউট হয়ে গেছে ১৬৪ রানে। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শান্ত ছাড়া প্রায় সব ব্যাটারই ব্যর্থ হয়েছেন। বেশিরভাগ ব্যাটারই বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে ২০০ রানের গণ্ডিই পেরুতে পারেনি টাইগাররা।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাকিব আল হাসান অবশ্য বেশ সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে দলের ব্যাটাররা সেটাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। এদিন বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার তানজিদ হাসান তামিমের। যদিও অভিষেকে আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। থিকশানার বলে শূন্য রানে এলবিডব্লিউ করে আউট হয়েছেন এই ওপেনার।
তানজিদ ফেরার পর নাইম শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। নাইম বেশ ভালো শুরুও করেছিলেন। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে লেংথ বলে অ্যাক্রোস দ্য লাইন খেলতে গিয়ে পয়েন্টে পাথুম নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন।
সাকিব এদিন চার নম্বরে নেমে থিতু হতে পারেননি। তিনি ৫ রান করে মাথিশা পাথিরানার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট লেংথ ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুশাল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব।
দলীয় ৩৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে এরপর পথ দেখিয়েছেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। দলীয় পঞ্চাশ পেরুতে খেলতে হয়েছে ১৩ ওভার পর্যন্ত। দুজনই দেখে শুনে বুঝে শট খেলেছেন। ৬৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন শান্ত।
শান্তর হাফ সেঞ্চুরির পরই আউট হয়েছেন হৃদয়। তিনি ৪১ বলে ২০ রান করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন। শানাকার অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল এগিয়ে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেছেন হৃদয়। শুরুতে তাকে আউট দেননি আম্পায়ার। শ্রীলঙ্কা রিভিউ নিলে দেখা যায় বলের ইম্পেক্ট ও হিটিং দুটোই লাইনের মধ্যে। ফলে থার্ড আম্পায়ার তাকে আউট করেন।
এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন শান্ত। তবে এই জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন পাথিরানা। এই লঙ্কান পেসারের করা ওয়াইড লেন্থের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চলে করুনারত্নের সহজ ক্যাচ হয়ে ফেরেন মুশফিক। তার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ১৩ রান।
এর আগেই একবার মুশফিকের ব্যাটে বল লেগে বল চলে গিয়েছিল উইকেটরক্ষকের হাতে। তবে আম্পায়ার ও লঙ্কান ফিল্ডারদের কেউই বুঝতে পারেননি। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল উইকেটরক্ষকের হাতে যাওয়ার আগে মুশফিকের ব্যাটে আলতো করে ছুঁয়ে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ দলের আক্ষেপ বাড়িয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের রান আউট। যদিও আউট হতে পারতেন দারুণ খেলতে থাকা শান্ত। তবে ভাগ্য জোরে বেঁছে যান তিনি। কাসুন রাজিথার করা লেংথ বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে শান্তকে রানের জন্য কল দিয়েছিলে শান্ত।
কল পেতে শান্ত ছুটেছেন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। তবে খানিক বাদেই মিরাজ মতো বদলে স্ট্রাইকিং অ্যান্ড থেকে যান। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা বল হাতে নিয়েই ছুড়ে মারেন নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। ফলে যেকোনো এক ব্যাটারকে আউট হতে হতো। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় মিরাজের আগে শান্তই স্ট্রাইকিং প্রান্তে ঢুকে গেছেন। ফলে ১১ বলে ৫ রান করা মিরাজকে আউট হয়ে যেতে হয়।
এরপর উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি প্রায় আড়াই বছর পর দলে ফেরা শেখ মেহেদী। তিনি দুনিথ ওয়েলালাগের বলে আউট হন এলবিডব্লিউ হয়ে। ১৬ বলের ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৬ রান। ১২১ বলে ৮৯ রান করে শান্ত হয়েছেন বোল্ড। থিকশানার বলে বলের লাইন মিস করে ফিরতে হয়েছে তাকে।
তাসকিন আহমেদ থিকশানার বলে পাথিরানাকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই। এরপর বেশিদূর এগোতে পারেনি বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমানকে এলবিডব্লিউ করে আউট করে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে দেন পাথিরানা।
খুলনা গেজেট/এমএম