খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

তালায় নদী খনন শেষ, ক্ষতিপূরণ না পেয়ে দিশেহারা জমির মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার তালায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সরকারের নেওয়া কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও টিআরএমের জন্য প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ পাচ্ছেন না জমিরা মালিকরা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৬ হাজার বিঘা জমির প্রায় ২ হাজার মালিক। তাদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতায় ক্ষতিপূরণের অর্থ আটকে গেলেও তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যথা নেই।

সূত্র মতে, বর্তমান সরকার ২৬১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ নদের পাড়ের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়) নামে একটি বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদন করে। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা সময় নির্ধারণ করা হয়। সরকার ঘোষিত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান দু’টি অংশ হলো- ৯০ কিলোমিটার নদী খনন এবং তালা উপজেলার জালালপুর, খেশরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন। পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে, উপকৃত হয়েছে ১৫ লাখ অধিবাসী। এ প্রকল্পের আওতায় সরকার ঘোষিত টিআরএম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ২০১১ ও ২০১২ সালে জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো পাননি জমির মালিকরা। আবার জমির কাগজপত্রগত জটিলতার কারণেও অনেক কৃষকের ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে গেছে।

এদিকে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যহত রাখার স্বার্থে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত ৪ বছর মেয়াদে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটির মূল কাজ হলো পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যহত রাখা এবং নদী খনন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ২ বছর অতিবাহিত হলেও আজও টিআরএম বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই।

স্থানীয়রা জানান, টিআরএমের জন্য সরকার প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ না পেয়ে অনেক কৃষক নিজ খরচে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে জমিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। ক্ষতিপূরণের অর্থের আশায় অপেক্ষায় থেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। ডিসি অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোন সুফল পাচ্ছেন এসব না কৃষকরা।

তালা উপজেলার দোহার গ্রামের মৃত আব্দুল মালেক সরদারের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৫৬) বলেন, টিআরএম প্রকল্পের মধ্যে আমাদের চার ভাইয়ের ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। দুই বছর হারি পেয়েছি। কিন্তু নয় বছর অতিবাহিত হলেও আমরা এ জমি বাবদ কোন টাকা পাই না। এতে করে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে আমরা বাধ্য হয়ে আবার ধান লাগাতে শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের প্রায় ৭ বিঘা জমির মাটি খনন করে বাঁধ দেওয়ায় সে জমিতে আগামী দুই তিন বছরে কোন ফসল উৎপাদন হবে না। এজন্য পুনরায় টিআরএম প্রকল্প চালু করতে হলে আমাদের বিগত বছরগুলোর হারির টাকা দিতে হবে।

একই গ্রামের আব্দুল বারি সরদার (৪৮) বলেন, টিআরএম আবারো হোক সেটা আমরাও চাই। তবে আমাদের এই নয় বছরের হারির টাকা দিতে হবে। অর্থের অভাবে আমার ছেলের লেখাপড়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা আমাদের জমির হারি টাকা খুবই দরকার। এই টাকা ছাড়া আমাদের অন্যকোন উপায় নেই।

স্থানীয় কৃষক আলিম বলেন, সরকারের এ প্রকল্পের কারণে এলাকায় এখন জলবদ্ধতা না থাকলেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা না খেয়ে মরছি। কিন্তু আমাদের সমস্যা দেখার কেউ নেই। ডিসি অফিস থেকে শুরু করে সবখানে গিয়েছি। কিন্তু সবাই আশার বাণী শুনালেও কোন কাজ হয় না।

জমির মালিক ফিরোজ সানা বলেন, আমাদের ৮ বিঘা জমি টিআরএম বিলে আছে। ২০১১ ও ২০১২ সালের টাকা সরকারের নিকট থেকে বুঝে পেয়েছি। এরপর ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি কোনো ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। অনেকবার সাতক্ষীরা ডিসি অফিসে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ডিসি অফিস থেকে একটাই উত্তর এসেছে ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো আসেনি।

তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান জানান, কপোতাক্ষ খননের প্রথম ফেইজে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় ফেইজে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও প্রথম দু’বছর ব্যতীত কোন কৃষক ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।

তিনি এসময় অভিযোগ করে বলেন, ডিসি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বিতীয় ফেইজে টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড জমা না দেওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় ফেইজে নদী খনন ৫০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। ডিসি অফিসে আমাদের টাকা জমা আছে, আরও টাকা জমা দেওয়া হবে। চাষীরা পর্যায়ক্রমে এই টাকা পেয়ে যাবে। কিন্তু কবে পাবে, বা বিগত বছরগুলোর টাকা কৃষকরা এখনো পাননি কেন, এমন প্রশ্নের তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!