সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবীতে তালা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টায় তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ভূমিজ ফাউন্ডেশন, উপজেলা নাগরিক কমিটি, প্রেসক্লাব ও পানি কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আলাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার। এ সময় তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে পানিসম্পদ মন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার বলেন, বাংলাদশেরে দক্ষণি-পশ্চমি অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সমস্যাটি প্রায় চার দশকব্যাপী অব্যাহত আছে। সমস্যাটি সমাধানরে জন্য সরকাররে পক্ষ থেকে এ যাবৎ যে সব পদক্ষপে বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা হলো নদী থেকে পলি অপসারণ, নদী খাল খনন, সুইসগেট ও বাঁধ সংস্কার, বিকল্প পথে পানি নিস্কাশন প্রভূতি। কিন্তু এসব র্কাযক্রম দ্বারা জলাবদ্ধতার প্রশমন ঘটানো যায়নি বরং জলাবদ্ধতার আরও বিস্তৃতি ঘটেছে এবং এলাকা ক্রমশঃ বসবাসে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এসব এলাকা থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ বাস্তভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচছে।
তিনি বলেন, গত শতাব্দীর ৯০ দশকের শুরুতে তালা উপজেলায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়। উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নে এ সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত। ক্ষতিগ্রস্থ জনসংখ্যা ৩ লক্ষাধিক। কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সকল সেক্টরই কম-বেশি জলাবদ্ধতা দ্বারা আক্রান্ত। অধিকাংশ এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং মানুষের পক্ষে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যে সব নদীগুলোর মাধ্যমে উপজেলার পানি নিষ্কাশিত হয় তা হলো- কপোতাক্ষ, শালতা, শালিখা, বেতনা ও আপারভদ্রা নদী। এরমধ্যে কপোতাক্ষ অববাহিকায় টিআরএম চালু থাকায় এই অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে। কিন্তু পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন পলি দূরবর্তী এলাকায় না পৌঁছানো, পেরিফেরিয়াল বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ,নদী ভাঙ্গনে নদী তীরে বসতি এলাকা ও হাটবাজার হুমকির মুখে পড়া, বিলের দরিদ্র মানুষদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচী না থাকা, ক্ষতিপূরণ উত্তোলনে ভোগান্তি এবং যথাসময়ে নদীর উপর ক্রসড্যাম দওেয়া এবং অপসারণ করা। শালতা নদী সরকার কর্তৃক খনন করা হচ্ছে কিন্তু অচিরেই এ নদী আবারও পলি দ্বারা ভরাট হয়ে যাবে। শালিখা নদী পোল্ডারের মধ্যে আবদ্ধ। ১, ২, ও ৬-৮ পোল্ডারের জন্য সরকার যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেখানে বেতনা নদীর জন্য প্রস্তাবিত টিআরএমকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ প্রকল্পের পরিণতিও হবে পূর্ববর্তী প্রকল্প সমূহের অনুরূপ। আপার ভদ্রা অববাহিকার বিলবুড়লী ও পাথরা বিল নর্ধিারতি আছে টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ১, ২ ও ৬-৮ পোল্ডারের জন্য গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে বেতনা অববাহিকার জন্য টিআরএম কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা এবং শালতা ও আপারভদ্রা অববাহিকায় টিআরএমকে যুক্ত করে প্রকল্প প্রণয়ণ, কপোতাক্ষ অববাহিকার জন্য গৃহীত দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের মধ্যে পাখিমারা বিল ও নদী ব্যবস্থাপনা এবং দরিদ্র মানুষদের জন্য পুনর্বাসন কার্যক্রম যুক্ত করা, আবদ্ধ শালিখা নদী উন্মুক্ত করে বেতনা ও কপোতাক্ষের সাথে সংযোগ, পাকুড়িয়া নদীকে কপোতাক্ষ ও বেতনার সাথে সংযোগ, আমতলী নদীর সাথে শালতার সংযোগ প্রদান, নদী-খাল-বলি সুইসগেট-বাঁধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং সকল কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবী জানান পানিসম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে।
খুলনা গেজেট/কেএম