খুলনার উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। এতে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তবে তরমুজ চাষের জন্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাত্রাঅতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। একতরফা ভাবে তরমুজ চাষে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে জমি। এখন আমন মৌসুমেও ভালো ভাবে ধান চাষ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সবাই মিলে তরমুজ চাষ করায় বাজার ব্যবস্থাও নষ্ট হয়ে পড়ছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) খুলনা নগরের সিএসএস আভা সেন্টারে আয়োজিত বিভাগীয় অ্যাডভোকেসি সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
খুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ‘জলবায়ু পরিবর্তন : একসাথে লড়াই, একসাথে পথ খোঁজা’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘জাগো ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার ‘নবোদয়’ প্রকল্প। ‘জলবায়ু পরিবর্তন সবার লড়াই, এই লড়াইয়ে কেউ একা নয়।’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় তরমুজের চাষাবাদ ও বাজার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন বক্তারা।
তরমুজ চাষে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে কৃষকদের প্রশিক্ষন ও একই সময়ে বহুমুখি ফসল চাষের আহ্বান জানানো হয়। জাগো ফাউন্ডেশনের প্রকল্প প্রধান ইফতিখার-উল-করিমের সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন দাকোপ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আনিচুর রহমান, জলবায়ু গবেষক সৈয়দ সাজিদুল ইসলাম ও টুয়ার্ডস সাসটেইনেবিলিটি এর জলবায়ুকর্মী নুসরাত জাহান।
প্যানেল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু একটি বৈশ্বিক সমস্যা নয়, এটি আমাদের স্থানীয় জীবনধারার সঙ্গে জড়িত। তাই এই সমস্যার সমাধানে স্থানীয় পর্যায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই হবে টেকসই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।
আয়োজকরা জানান, খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা প্রকটভাবে অনুভব করছে। লবণাক্ততা, নদীভাঙন, পানির সংকট এবং পরিবেশগত বিপর্যয় এখানকার মানুষের জীবনে নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়াও স্থানীয় প্রতিনিধি, জলবায়ু গবেষক ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে আমাদের প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে। নারীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে এমন কাজগুলো আরও বড় আকারে করতে হবে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারলে খুব সহজেই দেশের দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এএজে