‘সু চি যখন বন্দী, তখন রোহিঙ্গারা তাঁর মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল। অথচ ক্ষমতায় আসার পর সু চি রোহিঙ্গা নিপীড়নে মদদ দেন। সু চির জন্যই আমরা জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।’-বলছিলেন রোহিঙ্গা সিরাজুল ইসলাম (৪৫)। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অং সান সু চিকে আটক করার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সিরাজুল এ মন্তব্য করেন।
বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের শিকার হয়ে সিরাজুলের মতো সাড়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নিজেদের এই পরিস্থিতির জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সু চিরও দায় দেখেন রোহিঙ্গারা। কারও কারও মতে, মিয়ানমারে আবার সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এরপরও অং সান সু চিকে হটানোর ঘটনায় রোহিঙ্গারা খুশি।
সিরাজুল ইসলাম বললেন ‘সু চি ক্ষমতায় থাকলে জীবনেও রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব ফিরে পাবে না। জন্মভূমিতেও ফিরতে পারবে না।’ রোহিঙ্গা নাজির হোসেন (৫৫) বলেন, ‘সু চির উচিত শিক্ষা হয়েছে। তাঁকে আরও আগে সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগেও মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশয় নিয়েছে।
মধুরছড়ার একটি পাহাড়ের ঢালে ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত ছোট্ট ঘরে স্ত্রী, দুই ভাই-বোন ও চার সন্তান নিয়ে থাকছেন রোহিঙ্গা আমজাদ হোসেন। তাঁর বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে। আমজাদ বলেন, সু চির সরকার নাগরিকত্ব দেয়নি বলে এত দিন তিনি মিয়ানমার ফিরতে পারেননি।
শর্ত পূরণ ছাড়া একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে রাজি না হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর দুই দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিফল হয়।
উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিষয়ে সক্রিয় আছে ১০টির বেশি রোহিঙ্গা সংগঠন। অং সান সু চিসহ তাঁর সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ায় অধিকাংশ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খুশি।
এসব সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, ১৯৬০ সাল থেকে রোহিঙ্গা জনগণ পরিকল্পিতভাবে সরকার এবং চরমপন্থী রাজনীতিবিদদের গণহত্যার শিকার হয়ে আসছেন। মিয়ানমার সরকারের যৌথ সশস্ত্র দলগুলো রোহিঙ্গাদের গ্রাম, বাড়িঘর পুড়িয়েছে, হত্যা-ধর্ষণ করেছে। সবশেষ ২০১৫ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিষিদ্ধ করেছে মিয়ানমার সরকার।
খুলনা গেজেট / এআর