খুলনায় হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিক লাঞ্ছণার ঘটনা ঘটেছে । জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোমবার (১৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছিতের শিকার বৈশাখী টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি শেখ হেদায়েতুল্লাহ। তিনি সোমবার বেলা সাড়ে টার দিকে রোগীদের ভোগান্তি, ওষূধ পাচার, মেডিকেল রিপ্রেন্টেটিভ, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিদের দৌরাতœ নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। এ সময়ে বর্হিবিভার্গের টিকিট কাউন্টার ও রোগীদের অপেক্ষার স্থানে রোগীদের সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রিফাতসহ বেশ কয়েকজন লোক মোবাইল ফোন ও বৈশাখী টেলিভিশনের বুম ( মাইক্রোফোন) কেড়ে নিতে উদ্যত হন। এক পর্যায়ে তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে হুমকি দেন। অন্যথায পুলিশ দিয়ে হয়রানির হুমকিও দেওয়া হয়।
সাংবাদিক শেখ হেদায়েতুল্লাহ বলেন, পাবলিক প্লেসে ভিডিও করতে সাংবাদিকের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তারপরও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মিটিংয়ে থাকায় ভিডিও করার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি। কিন্তু চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে নাঈম, সাব্বিরসহ আরও কযেকজন তাঁকে তেড়ে আসেন। ঘটনা শুনে ডুমুরিয়া উপজেলার দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক জিএম আব্দুস ছালাম ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। তার সঙ্গে রিফাত ও নাইম দুর্ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদ্বয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে এক প্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে কক্ষ আটকে দেয়ার চেষ্টা করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল বিশ^াস তার কক্ষ থেকে বের হযে আসলে সাংবাদিক শেখ হেদায়েতুল্লাহ বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলমকে বিষয়টি জানান। তিনি (ডা. বাহার) উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বললে সে সময়ে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সবিজুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত এলাকা ছাড়া সাংবাদিকরা যে কোন স্থানের ভিডিও করতে পারেন। এতে আইনগত কোন বাধা নেই। আর হাসপাতালের বর্হিবভাগের ভিডিও করার কোন সমস্যা তো নয়। তিনি বলেন, কোন স্থানে যদি নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত বা গোপনা রক্ষার বিষয় থাকে সেখানকার ভিডিও চিত্র ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিযেশন খুলনা শাখার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম বলেন, সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের ভিডিও করতে সাংবাদিকদের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যদি সংরক্ষিত কোন স্থাপনা হয় বা নিষেধাজ্ঞা থাকে তবে অনুমতি নিয়ে ভিডিও করা উচিৎ। তিনি বলেন, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে এটি দুঃখজনক।
এদিকে খুলনা রিপোর্টার্স ইউনিটি -কেআরইউ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি কেআরইউ মনে করে, এই আচরণ অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ। একজন সাংবাদিক কখনোই জনস্বার্থে তার কাজের জন্য সরকারী অফিসের পাবলিক প্লেসে কাজ করার জন্য কারো অনুমোতি নেন না, নেবেও না। এই আচরণ স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর খুবই নগ্ন আক্রমণ। আমরা ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎক কর্মকর্তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে।
সংগঠনের নেতারা বলেন, বৈশাখি টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার শেখ হেদায়েতুল্লাহ ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাঃ রিফাত, ডাঃ সাব্বির ও ডাঃ নাঈম এর অযাচিত বাধা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের শিকার হয়েছেন। এসময় উল্লেখিত চিকিৎসকরা তার মোবাইল, লোগোসম্বলিত অফিসের মাইক্রোফেন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করার চেষ্টাও করে। পরে খুলনা বিএমএ এর সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলমের হস্তক্ষেপে চিকিৎসকরা নিবৃত হন।
খুলনা গেজেট/কেডি