জেলা পর্যায়ে মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়ে তিন দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ। ইতিমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে সকাল ১০টায় এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আর কোনো সম্মেলন আয়োজনের সুযোগ না থাকায় এবারের ডিসি সম্মেলন মাঠ প্রশাসনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোটের আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারে এবার ডিসিদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা থাকবে।
গত রোবাবার ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দেশের সব নির্বাচনেই প্রশাসনের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের বিষয়েও তাদের অবস্থান পরিষ্কার। নির্বাচনে সহযোগিতা করার জন্য তাদের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যকে কাজে লাগানো হবে এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই নির্বাচনে সহযোগিতা করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারের ডিসি সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নানা দাবি-দাওয়া তুলতে পারেন। নির্বাচনী বছর হওয়ায় এসব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে ইতিবাচক বার্তা দেয়া হবে ডিসিদের। পাশাপাশি শক্ত হাতে ও নির্ভয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য ডিসিদের দিক-নির্দেশনা দেয়া হবে। জেলা প্রশাসনের রুটিন কাজের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনাও থাকবে। নির্বাচনের আগে সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকলেও সেগুলো মেটানোর জন্যও নির্দেশনা থাকবে সম্মেলনে। সূত্র আরও জানায়, মাঠ পর্যায়ে চলমান থাকা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের তাগিদ দেয়া হবে সম্মেলনে। এছাড়া সমাপ্ত হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুফল জনগণের মধ্যে প্রচার করার তাগিদও থাকবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ভোটের আগে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরকারকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে অনেকটা দোটানায় ভোগেন। অনেকে নিরপেক্ষ থাকার মাধ্যমে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের সহায়তা করে থাকেন।
ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে দোটানায় থাকা কর্মকর্তাদের মনোবল অটুট রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশ নেবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসাবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।
এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন স্বাস্থ্যসেবা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ২৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ১৫টি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ১৩টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগ সংক্রান্ত ১১টি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ১০টি।
ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকছে- স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
গত বছর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ডিসিদের দেওয়া অনেক প্রস্তাবের মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ২৪২টি আমলে নিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে ১৭৭টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ৬৫টি প্রস্তাব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আবারও আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন।
এবার বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নির্দেশনা গ্রহণের পাশাপাশি স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করবেন ডিসিরা। তাছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সামরিক- বেসামরিক সমন্বয় বিষয়ক অধিবেশন সংযুক্ত করা হয়েছে।