খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার

ডিজিএফআই দিয়ে বিচারপতি সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন শেখ হাসিনা

গেজেট ডেস্ক 

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা তার দেশত্যাগের কারণ হিসেবে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এক্সক্লুসিভ এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কীভাবে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল এবং সে সময় কী কী ঘটেছিল তার সঙ্গে।

সংবিধানের ষোড়ষ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে পদ ও দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বিচারপতি এস কে সিনহা। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নজিরবিহীন এক পরিস্থিতির মধ্যে তার কার্যকাল শেষ হয় মেয়াদের ৮১ দিন আগেই। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের তোপের মুখে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি সেখানে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

গত ১৪ আগস্ট ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বিচারপতি সিনহা বলেন, সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট তা প্রমাণ করতে প্রস্তুত আছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে ফিরে যাব, এখন শুধু আমি গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় আছি। আমি সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করব এবং প্রমাণ করব যে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলি মিথ্যা।’

সাক্ষাৎকারে এস কে সিনহা বিশদ আলোচনা করেছেন, তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রেখেছিলেন এবং ডিজিএফআই সদস্যদের মাধ্যমে তাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন। কারণ তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও হস্তক্ষেপ উপেক্ষা করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন।

সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার শেষ দিনগুলো খুবই ভয়ংকর ছিল, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কারণ এটি উপলব্ধির প্রশ্ন। একজন বর্তমান প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। আমাকে কারও সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। আমার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, আমার বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনী (গোয়েন্দারা) স্ট্যান্ড গার্ড হিসেবে ছিল। তারা আমার বাড়িতে ঢোকার সময় আমার এক কর্মীকে মারধর করে। ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন প্রধান সাইফুল আবেদীন মধ্যরাতে আমাকে বিরক্ত করতেন এবং পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার জন্য চাপ দিতেন।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তার সহকর্মীরা (বিচারক) সরকারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আদালতে তার সঙ্গে বসতে অস্বীকৃতি জানান। প্রচণ্ড মানসিক চাপে ফেলে তাকে জানানো হয়, হাইকোর্টের বিচারকরা তাকে সহযোগিতা করবেন না।

‘তখন ভেবেছিলাম দেশে থাকার আমার কোনো অধিকার নেই’ বলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা।

তিনি বলেন, ‘তখন আমি ভেবেছিলাম সরকার হয়তো আমাকে দেশে থাকতে দেবে না। আমি তাড়াহুড়ো করে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ শেষ করেছিলাম (রায়ের সম্পূর্ণ পাঠ্য প্রকাশসহ)। সে সময় আমি এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোর প্রধান বিচারপতিদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে জাপান গিয়েছিলাম। কনফারেন্স রুম থেকে বের হওয়ার পর ডিজিএফআই থেকে কল আসে এবং একদিন পর আমি সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসি। তখন ডিজিএফআই সদস্যরা আমাকে সেখানে উপস্থিত আমার কর্মকর্তাদের কাছে যেতে দিচ্ছিল না। আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাতে তারা আমার সাথে আমার গাড়িতে যেতে চেয়েছিল। তখন আমি তাদের বলেছিলাম আমার গাড়ির প্রয়োজন নেই। আমি ভাবছিলাম এটি আরেকটি অশনি সংকেত।’

বিচারপতি এস কে সিনহার আরও বলেন, ‘একদিন আদালতে আমি সবেমাত্র আমার কাজ শেষ করেছি। তখন ডিজিএফআই প্রধান আমার অফিসে আসেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনি আমাকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। আমি চিৎকার করে বললাম। “আপনি কে এবং আপনি কী বলছেন?” তখন ডিজিএফআই প্রধান বলেন, তারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন, আইনমন্ত্রী বা অ্যাটর্নি জেনারেলের নয়… আমি তাকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলাম এবং এরপর থেকেই আমাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।’

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!