আজীবন মুক্তিসংগ্রামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আজ বৃহস্পতিবার বিদায়ী শ্রদ্ধা জানাবে সর্বস্তরের মানুষ। বারডেমের হিমঘর থেকে আজ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে তাঁর মরদেহ। সেখানে দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বেলা আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে প্রথম জানাজা। আগামীকাল শুক্রবার সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হবে দ্বিতীয় জানাজা। গরিবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাত জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দাফন করা হবে, নাকি দেহ দান করা হবে– এ সিদ্ধান্ত আজ তাঁর পরিবার জানাবে।
গত মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দীর্ঘদিন ধরে কিডনির রোগে ভোগা ডা. জাফরুল্লাাহ চৌধুরী। এই রোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা অসুখ নিয়েও তিনি বছরের পর বছর সরব ছিলেন সর্বত্র। অশক্ত শরীরে হুইলচেয়ারে বসে গণমানুষের দাবি আদায়ের প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন সম্মুখ সারিতে। আমৃত্যু রাজনীতি ও সমাজের অসংগতির সমালোচনা করে সাহসী মানুষ হিসেবে খ্যাতি পান বিলেতের সুখ ছেড়ে পাকিস্তানের পাসপোর্ট পুড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা কিংবদন্তি চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তায় বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ওষুধ শিল্প ও জনস্বাস্থ্য খাতে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন শোক জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজীবন দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। ছিলেন দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
গতকাল গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আলতাফুন্নেসা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিদায়ী যাত্রার সময়সূচি জানান। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননাও জানানো হবে। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ দাফন বিষয়ে তাঁর বোন আলেয়া চৌধুরী বলেন, পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য মরদেহ দানের পক্ষে। তিনি জীবদ্দশায় কয়েকবার বলে গিয়েছেন দেহ দান করতে। পরিবারের সদস্যরা তাঁর ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীরা ৯ ভাইবোন এবং স্ত্রী-সন্তানের সবাই ঢাকায় আছেন। দেহদানের সিদ্ধান্ত জানাজার পর তাঁরা জানাবেন। সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. নাজিমুদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরে ত্রিপুরার মেলাঘরে ৪৮০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় আত্মনিয়োগকারী জাফরুল্লাহর বড় অবদান ছিল ঔষধনীতি প্রণয়নে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে কম খরচে দরিদ্রদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় তিনি স্মরণীয়। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোনো দলে যুক্ত না হলেও রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। বলতেন, ‘আমি মানুষের রাজনীতি করি।’