‘হিলারি আদর্শপাড়ার’ বাসিন্দারা এখন ভালো আছেন। গ্রামের মাটির কাঁচা সড়কটি পাকা হয়েছে। ভাঙাচোরা খুপড়ি ঘর থেকে অনেকেই বর্তমানে পাকা ঘরে বসবাস করছেন। অনেকাংশে এ উন্নয়নের পেছনের অংশিদার দেশের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং আমেরিকার ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। এ কারণে গ্রামের মানুষেরা ওই পাড়াটির নাম বদলে ‘হিলারি আদর্শপাড়া’ রেখেছেন।
সূত্র জানায়, গত ২৮ বছর আগে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন যশোরাঞ্চলের বারবাজারে এসেছিলেন। তিনি তার বন্ধু বর্তমানে দেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম দেখে অবাক হয়েছিলেন। তার আগমনে ১৯৯৫ সালের ৩ এপ্রিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নের মহিষাহাটি গ্রাম উঠেছিল উৎসবমূখর।
হিলারি ক্লিনটন এখানে আসার পর মহিষাহাটি গ্রামের ঋষিপাড়া এলাকার নামকরণ করা হয় ‘হিলারি আদর্শপাড়া’। সে দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আদুরী দাস। স্বামীর নাম অজিত দাস। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তাদের। স্বামী কালীগঞ্জে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান। বড় ছেলে লিটন দাস ভ্যান চালান ও ছোট ছেলে ক্লিনটন সেলুনে কাজ করে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
আদুরী জানান, সেদিন এই পাড়ায় উৎসব লেগেছিল। হিলারি ক্লিনটন আসার কয়েকদিন আগে থেকেই পাড়ায় একটি কেন্দ্র খোলা হয়। যেখানে এখন মন্দির হয়েছে। মন্দিরের উল্টো দিকে রাস্তার পাশে একটা বড় ঘর বানানো হয়। শিশুদের সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পিটি প্যারেড ও অ্যাসেম্বলি শেখানো হতো। একটা ঢেঁকিঘরও বানানো হয়েছিল। হিলারি আসার দিন রং-বেরঙের মেলা বসেছিল। নানা ধরনের মিষ্টি-মিঠাই, খেলনা এবং পাড়ার শিশুদের সুন্দর সুন্দর পোশাক পরানো হয়েছিল।
গত ২৮ বছর আগে এলাকার রাস্তাটি ছিল কাঁচা। অনেকের বাড়িঘরও ছিল কাঁচা। এখন পাড়ার রাস্তাটি পাকা হয়েছে। অনেকের ঘরবাড়িও পাকা হয়েছে। পরিশ্রমী মানুষগুলোর জীবনযাত্রায় কিছুটা গতি এসেছে। এ পাড়ার বাসিন্দা শেফালি দাস বলেন, সেদিন তার ভাঙা ঘরে গিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন ও তার মেয়ে চেলসিয়া ক্লিনটন। তাদের সঙ্গে ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শেফালি বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের হিলারিপাড়া সমিতির কেন্দ্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ গ্রামের মীনা রানী বলেন, হিলারি, তার মেয়ে চেলসিয়া ও ড. ইউনূস আমার বাড়ির উঠানে এসেছিলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন হিলারি। সেই ছবি আমার কাছে এখনও আছে। সেসময় আমার বাড়ির জায়গা ছিল দুই শতাংশ। পরে আরও দুই শতাংশ কিনেছি। এখন চার শতাংশ জমি আছে। তারা আসার পর আমাদের জীবনযাত্রার উন্নতি হয়েছে। কাজের মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিও হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের বারবাজার শাখা ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, হিলারিপাড়ার বেশিরভাগ পরিবার আমাদের ব্যাংকের সদস্য। প্রায় ৮০ সদস্য ঋণগ্রহীতা। তাদের কিস্তি দেওয়ার হারও বেশ ভালো। কিস্তি পরিশোধ করে আবার ঋণ নেন। অবশ্য তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়তো হয়নি। কিন্তু কাজকর্ম করে সবাই মোটামুটি ভালো আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, হিলারিপাড়ার মানুষ মোটামুটি ভালো আছেন। তবে সেই অর্থে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়নি। অবশ্য এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। মাটির রাস্তাটি এখন পাকা হয়েছে। ভাঙা ঘরের অনেকে এখন পাকা ঘরে বসবাস করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম