মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের তিন মেয়াদে আয় বেড়েছে সাড়ে ১১ গুণের বেশি। সেই সঙ্গে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১০ গুণের বেশি বাড়লেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসায় নেই কোনো টিভি, ফ্রিজ কিংবা ইলেকট্রনিক কোনো সামগ্রী। অথচ ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তার ১ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল।
২০০৮ সালের এবং এবারের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট অথবা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত এবং অন্যান্য বাবদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বার্ষিক আয় এখন ৮ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৫ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯১ টাকা। এ হিসাবে গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৩ গুণ।
হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ। এবার নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র, যানবাহন ও অন্যান্য বাবদ তার অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬১ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা। এ হিসাবে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা।
অনেকের কাছে অবিশ্বাসযোগ্য হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এবারের জমা দেওয়া হলফনামা থেকেই সেই তথ্য জানা গেছে। অথচ ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তার ১ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল।
হলফনামায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০০৮ সালে জাহিদ মালেকের নামে অকৃষিজমি ছিল ২ দশমিক ৫ কাঠা এবং তার স্ত্রীর ছিল ২ দশমিক ৫ কাঠা। এ ছাড়া ৫৩ দশমিক ৪ শতক জমিতে ১১ তলা আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন এবং বাড়ি ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় ৪০ বিঘা কৃষিজমি ছিল। এখন এই স্থাবর সম্পদের পরিমাণ অপরিবর্তনীয় রয়েছে। তবে স্ত্রীর নামে ২ দশমিক ৫ কাঠার ওই জমি এবার নির্ভরশীলদের নামে স্থানান্তর করা হয়েছে। যৌথ মালিকানার ৪০ বিঘা কৃষিজমি এবার নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
হলফনামা অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী শাবানা মালেকের সামান্য অস্থাবর সম্পদ কমেছে। ২০০৮ সালে হলফনামায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকার বন্ড বা ঋণপত্র ছিল। ২০২৩ সালের হলফনামায় নেই বন্ড বা ঋণপত্র ।
তবে ১৫ বছরে তার ৫ ভরি স্বর্ণ বেড়ে ৫৫ ভরি হয়েছে। ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর প্রায় ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ কমেছে।
২০০৮ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীলদের ২৫ ভরি স্বর্ণ থাকার ঘোষণা থাকলেও এবারে তা উল্লেখ নেই। নির্ভলশীলদের কোনো স্বর্ণ নেই।
এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এবং সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ও কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯ টাকা দায় রয়েছে। ২০০৮ সালে সেই দায়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ১ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৯ টাকা ঋণ বা দায় রয়েছে। সূত্র : যুগান্তর।
খুলনা গেজেট/এনএম