যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের একটি কেলেঙ্কারির সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তাঁর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে টিউলিপের পদত্যাগের কথা উঠেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। এ পদে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। টিউলিপ গত আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা একাধিক বাড়িতে বসবাস করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ছায়া (শ্যাডো) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ক্রিস ফিলিপ বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের নিজের সম্পদের উৎস নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় এসেছে। তাঁর খালার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সেখান থেকে এই সম্পদগুলোর কোনোটি এসেছে কি না, তা–ও ব্যাখ্যা করতে হবে।
এসব প্রশ্নের জবাব না মেলা পর্যন্ত আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের যে দায়িত্বে টিউলিপ রয়েছেন, তা থেকে তাঁকে সরানোর জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্রিস ফিলিপ। তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রধানমন্ত্রী ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছেন। তিনি কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছেন না। এ থেকে বোঝা যায়, তাঁর (স্টারমার) মধ্যে শক্তি ও সততার অভাব রয়েছে।
কেলেঙ্কারির অভিযোগের প্রসঙ্গে আগেও টিউলিপের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। সোমবারও এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, টিউলিপের প্রতি আস্থা রয়েছে তাঁর।
তবে লেবার পার্টির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, টিউলিপের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়গুলো সামাল দেওয়া দলের নেতৃত্বের কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তাতে বলা হয়, লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে টিউলিপের মালিকানায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০০৪ সালে সেটি আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিনা মূল্যে পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল আবদুল মোতালিফের।
পরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসের খবরে বলা হয়, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের বোনকে বিনা মূল্যে আরেকটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন মঈন গনি নামের এক ব্যক্তি। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। হ্যাম্পস্টেডের ওই ফ্ল্যাটে একসময় বসবাস করেছিলেন টিউলিপ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাটে টিউলিপ ও তাঁর পরিবারের বসবাসের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বাংলাদেশে ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ, তাঁর খালা শেখ হাসিনা, মা শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মাসে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচ