অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির লড়াই একেবারে হাতে গোনা। মাত্র চার ম্যাচ। সবগুলো হয়েছে বিশ্বকাপে। রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, অ্যাডাম গিলক্রিস্টদের দলের কাছে লাপাত্তা বাংলাদেশ। প্রতি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হারে ফুটে উঠেছে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অসহায়ত্ব। প্রথমবার এই ফরম্যাটে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে শেষবার তাদের দেখা হয়েছিল পাঁচ বছরেরও বেশি সময় আগে। প্রথম দেখা ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে।
তা কেমন ছিল বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লড়াইয়ের চিত্র। কেপ টাউন থেকে শুরু করে বেঙ্গালুরু, এমনকি ঢাকাতেও দেখা হয়েছে তাদের। কিন্তু ভাগ্য খোলেনি একবারও। তো একবার দেখে নেওয়া যাক টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা-
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে জয়ী।
‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচ। রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের বাংলাদেশ। কেপ টাউনে আগে ব্যাট করতে নেমে ব্রেট লির তোপে ৮ উইকেটে ১২৩ রানে থামে তারা। তামিম ইকবালের ৩২ রান ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ, ৩১ রান আফতাব আহমেদের। দুই অঙ্কের ঘরে আর কেবল রান করেন নাজিমউদ্দিন (১১) ও সাকিব আল হাসান (১৬)।
ব্রেট লি ৩ উইকেট নেন, যা অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ। দুটি পান নাথান ব্র্যাকেন।
লক্ষ্যে নেমে অনায়াসে জেতে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও ম্যাথু হেইডেনের ১০৪ রানের জুটি ছিল অনবদ্য। ১৩.৫ ওভারে ১ উইকেটে ১২৪ রান করে অজিরা। ৪৩ রানে গিলক্রিস্টকে রান আউট করা ছিল বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি। ৭৩ রানে অপরাজিত ছিলেন হেইডেন, পন্টিং খেলছিলেন ৬ রানে। ম্যাচসেরা হন ব্রেট লি।
৫ মে, ২০১০, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
ফল: অস্ট্রেলিয়া ২৭ রানে জয়।
পরের বিশ্বকাপে আবারও অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচ। বাংলাদেশের নেতৃত্বে সাকিব আল হাসান। তার স্পিনের সঙ্গে মাশরাফি মুর্তজার পেস ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়াকে থামায় ৭ উইকেটে ১৪১ রানে।
৬৫ রানের মধ্যে তাদের ৬ উইকেট তুলে নিয়ে দারুণ লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাইকেল হাসি দাঁড়িয়ে যান স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে, তাদের ৭৪ রানের জুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দেয় অজিদের। সাকিব ও মাশরাফি সমান দুটি করে উইকেট নেন।
লক্ষ্যটা বড় ছিল না। কিন্তু ডার্ক ন্যানিসের তোপে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও আশরাফুল ডাক মারেন। এই ব্যর্থতায় সাকিব ২৮ ও মুশফিক ২৪ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ১৮.৪ ওভারে ১১৪ রানে অলআউট তারা।
ন্যানিস সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট নেন স্মিথ ও ডেভিড হাসি। দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে ম্যাচসেরা হন মাইক হাসি।
১ এপ্রিল, ২০১৪, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী।
এবার ঘরের মাঠে বাংলাদেশ মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়ার। নাথান কোল্টার নাইলের পেসে তার প্রথম দুই ওভারে ওপেনার তামিম (৫) ও এনামুল হক বিজয় (০) মাঠছাড়া। ১২ রানের মধ্যে নেই তারা। সাকিব ও মুশফিক মাতালেন মিরপুরে আগত হাজার হাজার দর্শককে। তাদের ১১২ রানের জুটি ছিল রোমাঞ্চকর।
মুশফিক আউট হন হাফ সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থাকতে। শেন ওয়াটসন তাকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ বানান। ৩৬ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৪৭ রান করেন অধিনায়ক। আর সাকিবের ৫২ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারকুটে ৬৬ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দেয় ৫ উইকেটে ১৫৩ রানের সংগ্রহ।
এই স্কোরে জয়ের স্বপ্ন দেখা দোষের ছিল না বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নারের দুরন্ত শুরুতে তা ভেঙে যায় ইনিংসের মাঝপথে। ৯৮ রানের জুটি গড়েন তারা। অবশ্য ওয়ার্নারকে হাফ সেঞ্চুরি করতে দেয়নি স্বাগতিকরা। আল আমিন হোসেনের বলে ৪৮ রানে থামেন অজি ওপেনার।
মূলত ফিঞ্চই বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ বের করে আনেন। ৪৫ বলে ৭ চার ও ৪ ছয়ে ৭১ রানের সেরা ইনিংস খেলেন তিনি। জয় থেকে ৭ রান দূরে থাকতে আউট হন ফিঞ্চ। তবে জয় থেমে থাকেনি, ১৭.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
২১ মার্চ, ২০১৬, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।
বেঙ্গালুরুতে চতুর্থবার মুখোমুখি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। এবারও হারের বৃত্ত ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ, নেতৃত্বে মাশরাফি মুর্তজা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে আবারও দেড়শ ছাড়ায়। ৫ উইকেটে করে ১৫৬ রান। অ্যাডাম জাম্পার স্পিন আর ওয়াটসনের তোপে তটস্থ বাংলাদেশের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। সর্বোচ্চ ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন, তার ২৯ বলে ৭ চার ও ১ ছয়ের ঝড়ো ইনিংস ছিল বলার মতো। এছাড়া ৩৩ রানের ইনিংস খেলে সাকিবও ভূমিকা রাখেন।
জাম্পা সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন। ওয়াটসন পান বাকি ২ উইকেট।
১৫৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের মাঝপথে দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশ। ১৪তম ওভারের প্রথম বল থেকে ১৮তম ওভারের শেষ বল পর্যন্ত ৫৭ রানের ব্যবধানে ৬ উইকেট নেয় তারা। কিন্তু উসমান খাজার ৪৫ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে ততক্ষণে জয়ের ভিত গড়ে ফেলে অজিরা। ১৫ বলে দুটি করে চার ও ছয়ে ২৬ রানের ম্যাচ নির্ণায়ক ইনিংস খেলেন ম্যাক্সওয়েল।
এই উইকেট ঝড় থামার তিন বল পরই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় অস্ট্রেলিয়া। ১৮.৩ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৭ রান করে তারা।
সাকিব সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন। দুটি পান মোস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচসেরা হন জাম্পা।